ব্যক্তিজীবন, সংসারের দায়িত্ব বা অফিসের কাজের স্ট্রেস বা চাপ আমাদের নিতেই হয়। এই চাপ যেন দিন দিন আমাদের আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছে। কিন্তু আপনার যদি মনে হয় যে প্রতিনিয়ত স্ট্রেস সামলাতে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, আপনার মধ্যে ভয় কাজ করে বা সব ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে মন চায়, তাহলে এটি আপনার জন্য মোটেও সুখকর নয়।

আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও তা দীর্ঘ মেয়াদে ডেকে আনবে ভয়াবহ ফল। তবে ছোট্ট কয়েকটা অনুশীলন আপনার মনকে শান্ত করবে। সাহায্য করবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।

গভীর শ্বাস নিন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে দ্রুত শ্বাস নিন। কারণ, কোনো সমস্যায় পড়লেই আমাদের স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। আর এই হরমোন আমাদের অস্থির করে তোলে। গভীরভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস নিলে আমাদের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়, আমাদের পেশি শিথিল হতে থাকে। মস্তিষ্ক একবারে অনেকখানি অক্সিজেন পায়। তাই যখন স্ট্রেসড অনুভব করবেন, তখন অন্তত ২ মিনিট ধরে জোরে শ্বাস নিন, পেটের মধ্যে শ্বাস আটকে রাখুন, ছেড়ে দিন। এই শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা আর নেতিবাচকতা দূর করে কাজে মন দিতে সাহায্য করে।

ইতিবাচক দিকগুলোতে মনোযোগ দিন যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আপনার মাথায় খারাপ চিন্তা আসা স্বাভাবিক। তবে এই চিন্তার মধ্যে ডুবে গেলেই সমস্যা! কারণ, এটি অহেতুক আপনার উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে, আতঙ্কিত করে। নেতিবাচক চিন্তা মাথায় এলে সেটাকে ইতিবাচক কিছুতে বদলে ফেলতে চেষ্টা করুন। এক-দুই দিনের চেষ্টায় হয়তো সেটা করতে পারবেন না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যান। কাজ শুরুর আগে কল্পনা করুন, কাজটি ভালোভাবে শেষ হচ্ছে, কাজটির জন্য আপনি প্রশংসিত হচ্ছেন। তারপর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেখবেন, মনে একটা ফুরফুরে আমেজ আসছে। আপনি অনুভব করতে পারবেন, আগের চেয়ে ভালোভাবে কাজটি করতে পারছেন।

রাতের পর্যাপ্ত ঘুম রাতে ভালো ঘুম না হলে কাজ করতে যেমন স্ট্রেসড লাগে, তেমনি স্ট্রেসড থাকলে আমাদের রাতের ঘুম হাওয়া হয়ে যায়। বলা যায়, এটি একটি দুষ্টচক্র। আর এই চক্র ভাঙার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। রাতে ঘুম আসতে দেরি হলে সন্ধ্যার পর থেকে চা বা কফিজাতীয় খাবার, ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। মোবাইল-টিভি-ল্যাপটপের স্ক্রিনের নীল আলো আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে নীল রশ্মি থেকে দূরে থাকুন।

ব্যায়াম করুন প্রেশার আর স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম করলে যে হরমোন নিঃসৃত হয়, তা আমাদের মন ফুরফুরে করে, নতুন করে চিন্তায় সাহায্য করে। কাজের সময় প্রেশার নিতে না পারলে অফিসেই হালকা ব্যায়াম করুন। বাইরে গিয়ে ৫-১০ মিনিট হেঁটে আসুন। এরপর কাজ করতে বসলে কাজে নতুন প্রেরণা পাবেন। সামান্য বিরতি নিয়ে কাজে বসলে হয়তো পেয়ে যেতে পারেন নাছোড় কোনো সমস্যার সমাধানও!

মেডিটেশন করুন মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমে। দীর্ঘদিন ধরে মেডিটেশন আমাদের ঠান্ডা মাথায় ভাবতে সাহায্য করে। বাইরের স্ট্রেস তখন আমাদের স্পর্শ করে কম। অনেকেই ভাবেন মেডিটেশন মানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা। এটা মোটেও কার্যকর পদ্ধতি না। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য দুই থেকে তিনবার এক জায়গায় চুপচাপ বসুন, কোনো কিছু না ভেবে নিজের নিশ্বাসের ওপর মনোনিবেশ করুন। চাইলে নিজের জীবনে প্রতিদিনের ভালো ভালো ব্যাপারগুলো নিয়েও ভাবতে পারেন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দিনে ঘটে যাওয়া সব ভালো কিছুর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন, কৃতজ্ঞ হোন। এতে আপনার মন শান্ত হবে।

ইতিবাচক মানুষকে সঙ্গী বানান আপনার কর্মক্ষেত্রে যারা আপনাকে চাপের মধ্যে রাখেন, তাদের সঙ্গ আপনি হয়তো পরিহার করতে পারবেন না। তবে এমন দু-একজন মানুষ খুঁজে বের করুন, যাদের সঙ্গে আপনার মিশতে ভালো লাগে, যারা আপনাকে বোঝেন। যখন চাপের মধ্যে থাকবেন, বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটান। নিজের সমস্যাগুলো খুলে বলুন। আপনার সমস্যা হয়তো দিন শেষে আপনাকেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু সমস্যা ভাগ করে নিলে তা আপনাকে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *