অনলাইন ডেস্ক ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:১২
মিয়ানমারের অভ্যুত্থান জান্তা এবং রোসাটম স্টেট কর্পোরেশন-রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কোম্পানি-গতকাল পারমাণবিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। জান্তার নেতৃত্বাধীন জেনারেল মিন অং হ্লাইং, মস্কো সফর করছেন,রাশিয়ান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সাথে দেখা করার পর সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মিয়ানমার তার পরমাণু উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রাশিয়ার সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে সই করেছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী-নিয়ন্ত্রিত সরকার এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরমাণু সহযোগিতা সংস্থা রোসাটমের মধ্যে মিয়ানমারে সম্ভাব্য একটি মডিউলার চুল্লি প্রকল্প বাস্তবায়নসহ অধিকতর আণবিক জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তিতে সই করেছে।
রাশিয়ার ভøাদিভস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের (ইইএফ-২০২২) সম্মেলনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার এই চুক্তিতে সই হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তার প্রধান মিন আং হ্লাইন ফোরামে অংশ নিতে রোববার সেখানে পৌঁছেন। ইরাবতী ডটকম।
রোসাটম জানিয়েছে,মিন আং আহ্লাইনের উপস্থিতিতে মিয়ানমারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মিয়ো থিন কিয়ো এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী থাং হ্যান এবং রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ চুক্তিতে সই করেন। রুশ পরমাণু সংস্থা জানায়,‘শান্তিপূর্ণভাবে আণবিক জ্বালানির ব্যবহারে’ সহযোগিতা জন্য এই চুক্তি হয়। সংস্থাটি জানায়, চুক্তিতে মিয়ানমারে একটি ছোট মডিউলার স্থাপন এবং সেইসাথে মিয়ানমারে পরমাণু জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ও রয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্র বুধবার জানায়,আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য পরমাণু জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার;বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পরিচালনা ও গবেষণা করা;ওষুধ প্রস্তুত; বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ শিল্প ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতার জন্য এই চুক্তি সই হয়। এর আগে গত জুলাই মাসে মিয়ানমারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মায়ো থিন কিয়োর সাথে রোসাটমের সই হওয়া সমঝোতা স্মারণের ধারাবাহিকতায় এই চুক্তি হলো।
মিয়ানমারের দীর্ঘ পরমাণু স্বপ্ন :মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা দীর্ঘ দিন ধরে পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে স্বপ্ন দেখে আসছিলেন।
দেশটি একটি পরমাণু চুল্লি স্থাপনের জন্য ১৯৯৯ সালে রাশিয়ার সাথে আলোচনা শুরু করে। এরপর ২০০২ সালের জানুয়ারিতে ওই সময়ের সামরিক সরকার শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে একটি পরমাণু গবেষণা চুল্লি নির্মাণের পরিকল্পনা নিশ্চিত করে। ওই সময় মিয়ানমারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী খিন মং উইন ঘোষণা করেন, মিয়ানমার দীর্ঘ দিন ধরেই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু জ্বালানির প্রতি আগ্রহী রয়েছে।
রাশিয়া ২০০৭ সালে মিয়ানমারে একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণে রাজি হয়। এতে ২০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউ-২৩৫ মাত্রার ১০ মেগাওয়াট থার্মাল লাইট ওয়াটার চুক্তি বসানোর কথা বলা হয়। এ ছাড়া একটি মেডিক্যাল আইসোটপ উৎপাদন গবেষণাগার,সিলিকন ডোপিং সিস্টেম,পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট বসানোর চুক্তিও হয়।
এ দিকে উত্তর কোরিয়াও গোপনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সাথে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। পরমাণু কর্মসূচিতে সহায়তা লাভের জন্য ২০০৮ সালে মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেল শ মন গোপনে পিয়ংইয়ং সফর করেন বলে জানা গেছে।
তিনি যেসব স্থাপনা পরিদর্শন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জেট বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ট্যাংক এবং পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ ও সুরক্ষিত রাখার জন্য পার্বত্য এলাকায় নির্মিত গোপন টানেল কমপ্লেক্স।
সূত্রঃএশিয়া নিউজ,ইরাবতী ডটকম