অনলাইন ডেস্ক ।মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২, ৩ কার্তিক ১৪২৯
ব্যালন ডি’অর তার শ্রেষ্ঠত্ব হারায়নি। সবচেয়ে মর্যাদার এই পুরস্কার উঠেছে গত সিজনের সেরা ফুটবলার ফ্রান্স এবং রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বেনজেমার হাতেই।
ব্যালন ডি’অরের ৬৬তম আসরে প্রথমবারের মতো এই শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার নিজের করে পেলেন ফরাসি এই বিশ্বকাপজয়ী তারকা।‘
করিম বেনজেমা এবারের ব্যালন ডি’অর জিতবেনই। কেবল জিতবেন না, বিশাল ব্যবধানেই জিতবেন। আর যদি সেটি না হয়, তবে ব্যালন ডি’অরের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন চিরকালই থাকবে।’- ফুটবল ভিত্তিক ওয়েবসাইট গোল.কমের একটা আর্টিকেলে এভাবেই বেনজেমার ব্যালন ডি’অর জয় নিয়ে লেখা ছিল।
ফ্রান্সের পক্ষে সর্বশেষ ব্যালন জেতা কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের হাত থেকে শ্রেষ্ঠত্বের এই পুরস্কার পেলেন বেনজেমা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের পক্ষে সর্বশেষ ব্যালন জিতেছিলেন জিদান।
এবার বিতর্ক এবং সমালোচনাকে এড়ানোর জন্য চলতি বছরের মার্চে কিছু ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের কমিটি ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মের পরিবর্তন আনে।
যেখানে মূল শর্ত ছিল, বছর নয় বরং একটা নির্দিষ্ট সিজনের উপর ভিত্তি করে এখন থেকে দেওয়া হবে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। এমনকি এই মর্যাদার পুরস্কার জয়ের জন্য ভোটিং এর নিয়মেও পরিবর্তন আনে আয়োজক কমিটি।
ফলে এই বছরের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স ২০২২ নয় বরং ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য বিবেচিত হবে।
আর গত সিজনের পারফরম্যান্স বিবেচনায় সবার চেয়ে এগিয়েই ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা।
গত সিজনে জাতীয় দল এবং লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে শুরু করে লা লিগা, উয়েফা ন্যাশন্স লিগ এবং সুপারকোপা জিতেছেন বেনজেমা।
কেবল শিরোপা জেতা নয় বেনজেমা গত সিজনে ছিলেন অসাধারণ, অতিমানবীয়। ২০২১-২২ সিজনে ক্লাব এবং জাতীয় দল মিলিয়ে ৪৮ গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও ১৫টি রিয়ালকে বলা চলে একাই জিতিয়েছেন ইউরোপ সেরার শিরোপা।
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের আসরে ১২ ম্যাচে করেছেন ১৫ গোল। এরমধ্যে শেষ ষোলোতে মেসির পিএসজিকে হারানো ম্যাচে করেছিলেন হ্যাট্রিক।
এরপর চেলসির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও হ্যাট্রিক করে দলকে এগিয়ে রেখেছিলেন। ব্লুজদের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে করেছেন ৪ গোল।
এমনকি ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সেমিফাইনালের দুই লেগেও ৩৪ বছর বয়সী এই ফরাসির পা থেকে এসেছে ৩ গোল। কেবল গোল নয়, পিছিয়ে পড়েও রিয়ালকে জিতিয়ে একের পর এক রুপকথার গল্পই যেন লিখেছেন। লা লিগায়ও শিরোপা জেতার পথে করেছিলেন ২৭ গোল।
২০০৯ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে স্প্যানিশ রাজধানীতে পাড়ি জমানোর পর লিঁওর সাবেক এই স্ট্রাইকার এ পর্যন্ত জিতেছেন পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
২০১৮ সালে পর্তুগীজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর রিয়ালের হাল ধরেন বেনজেমা। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। ওই সময় থেকেই ব্যালন ডি’অর জয়ের আকাঙ্ক্ষার মনে বাসা বাঁধে।
এ সম্পর্কে বেনজেমা বলেছেন, ‘কার্যত ওই সময় থেকেই শুরু। লক্ষ্য ছিল কঠোর পরিশ্রম করে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে। আমি সৌভাগ্যবান যে বিশ্বের সেরা ক্লাবে খেলার সুযোগ পাচ্ছি।
২১ কিংবা ২২ বছর বয়সে আমার মধ্যে সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল না, যা আজ আছে। এমনও সময় গেছে যখন আমি একা ভালডেবেলাসে সময় কাটিয়েছি, ওই সময় হয়তো অন্যরা নিজেদের জাতীয় দলের দায়িত্বে ব্যস্ত ছিল। আমার জন্য ওই মুহূর্তগুলো দারুণ কঠিন ছিল।’
গত বছর আগস্টে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও মনোনীত হয়েছিলেন বেনজেমা। স্পেনকে পরাজিত করে ফ্রান্সকে নেশন্স লিগের শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন।
ফাইনালে ২-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে লেস ব্লুজদের হয়ে তিনি গোল করেছেন।
২০১৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী দলে তিনি না থাকলেও এবার কাতার বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিয়ে দেশকে শিরোপা ধরে রাখতে সহযোগিতা করতে চান।
এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পর বিশাল বিশাল ব্যবধানেই ব্যালন ডি’অর জয়ের কথা ছিল বেনজেমার। এই ফরাসি সুপারস্টার বিশাল ব্যবধানেই জিতেছেন।
পঞ্চম ফরাসি হিসেবে মর্যাদার এই পুরস্কার নিজের করে নিলেন বেনজেমা। তার আগে ফ্রান্সের পক্ষে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি, জ্যা পিয়েরে পাপিন, জিনেদিন জিদান এবং রেমন্ড কোপা।
করিম বেনজেমা ছাড়া ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে পুরস্কার জিতেছিলেন যারা
কোপা ট্রফি (সেরা তরুণ ফুটবলার): গাভি (স্পেন/বার্সেলোনা)।
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড (জনকল্যাণমূলক কাজ করায়): সাদিও মানে (সেনেগাল/বায়ার্ন মিউনিখ)।
নারী ব্যালন ডি’অর জয়ী: অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস (স্পেন/বার্সেলোনা)।
গার্ড মুলার ট্রফি (ইউরোপের সেরা গোলদাতা): রবার্ট লেভানদোভস্কি (পোলান্ড/বার্সেলোনা)।
লেভ ইয়াসিন ট্রফি (সেরা গোলরক্ষক): থিবাও কর্তোয়া।
সেরা ক্লাব: ম্যানচেস্টার সিটি।