ছবি- সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করা হচ্ছে। এই বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডাকে পাশ কাটিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউটে জায়গা করে নিয়েছিল আফ্রিকার মুসলিম দেশ মরক্কো।

এরপর শেষ ষোলোয় সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারায় আশরাফ হাকিমিরা। এবার তারা বিদায় নিশ্চিত করলো রোনালদোর পর্তুগালের।অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এক জয়। ইতিহাসের পাতায় এটলাস লায়ন্সরা। নকআউটে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে মুসলিম এই দেশটি। মেগা আসর ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই প্রথম জায়গা করে নিলো আফ্রিকার কোনো দেশ। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ইউরোপের দেশ পর্তুগালকে ইউসেফ নেসিরির একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে হারায় মরক্কো। আর তাতেই মরক্কো তথা আফ্রিকার কোনো দেশের প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয়া সেমিফাইনালে।
আল থুমামা স্টেডিয়ামে পর্তুগালের সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ছাড়াই মূল একাদশ সাজায় কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। অপর দিকে গ্রুপ পর্বে র্যাংকিংয়ে দুইয়ে থাকা বেলজিয়ামকে হারিয়ে অপরাজিত থাকা মরক্কো। এক দিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ আসরে পর্তুগালের পরাজয় মরক্কোর কাছে। অপর দিকে রাশিয়া আসরে রোনালদোর একমাত্র গোলে পরাজিত হয়েছিল মরক্কো। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে গতকাল প্রতিশোধের মিশনে মাঠে নামে দুই দল।
ম্যাচের শুরু থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে থাকে রোনালদোবিহীন পর্তুগাল। বল দখলের লড়াইয়ে ৭৪ ভাগ এগিয়ে ছিল সান্তোসের দল। আক্রমণে তটস্থ করে রাখে মরক্কোর রক্ষণভাগ। ম্যাচে মরক্কোর কৌশল ছিল রক্ষণাত্মক খেলে কাউন্টার অ্যাটাক। বল দখলে পিছিয়ে থেকেই পাল্টা আক্রমণে গোল আদায় করে নেয় মরক্কো। ম্যাচের ৪২ মিনিটে আসে মরক্কোর প্রত্যাশিত একমাত্র গোলটি। বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠে মরক্কোর বৌফাল বক্সে বল ভাসিয়ে দিলে পর্তুগিজ গোলরক্ষক আগুয়ান কস্তাকে পরাস্ত করে হেডে বল জালে জড়ান ইউসুফ নেসিরি।
ম্যাচের ৩০ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল পর্তুগালের। বক্সের বাইরে থেকে ফিলিক্সের ডান পায়ে জোরালো শট মরোক্কর ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৪০ মিনিটে আবার বাঁ দিক থেকে আসা ক্রসে ফিলিক্সের শট খুঁজে পায়নি জালের ঠিকানা। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে পর্তুগালের দুর্ভাগ্য হয়ে দাঁড়ায় গোলবার। দালুতের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে ব্রুনো হার্নান্দেজ ডান প্রান্ত থেকে শট নিলে গোলরক্ষক বোনো পরাস্ত হলেও বল প্রতিহত হয় বারের ওপরে লেগে। ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় পর্তুগাল।
বিরতি থেকে ফিরেই কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ম্যাচের ৫১ মিনিটে মাঠে নামান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। পর্তুগালের আক্রমণে মরক্কোর ডিফেন্স তটস্থ হয়ে পড়ে। ৫৯ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে ওতাভিয়ার ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রামোস। ৬৫ মিনিটে আবারো ব্রুনো ফার্নান্দেজের দুর্দান্ত শট গোলবারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে গেলে হতাশ পর্তুগাল।
ম্যাচের ৮৩ মিনিটে পর্তুগালের নিশ্চিত গোলের সুযোগ নস্যাৎ করেন বোনো। ডি বক্সের সামান্য ভেতরে থেকে হোয়াও ফেলিক্সের বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৯০ মিনিটে রোনালদোর ডান পায়ের শটে পরাস্ত করতে পারেননি গোলরক্ষক বোনোকে।
৯৩ মিনিটে মরক্কোর চেদিরা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেলে (লাল কার্ড) ১০ জনের দলে পরিণত হয় আফ্রিকান দলটি। ম্যাচের ৯৫ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন মরক্কোর আবুখলাল। ৯৭ মিনিটে পেপের হেড গোলবার ঘেঁষে চলে গেল বাইরে। ম্যাচের ইনজুরি সময়ের শেষ দিকে আরো দু’টি গোলের সুযোগ পেলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় পর্তুগাল। ফলে বিশ্বকাপে ১৯৮৬ আসরের প্রতিশোধ নেয়া হলো না পর্তুগালের। অপর দিকে রাশিয়া আসরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল আফ্রিকার দেশ মরক্কো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *