১০ অক্টোবর ২০২২, ২৫ আশ্বিন ১৪২৯, ১৩ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরি
ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিভিতে শনিবারের লাইভ সংবাদ সম্প্রচার হ্যাক করেছে প্রতিবাদকারীরা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ প্রচারে বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে।
সংবাদ চলাকালে হঠাৎই টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে একটি মুখোশ, এর পরপরই দেখা যায় দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি খামেনির ছবি এবং তার চারপাশ ঘিরে আগুন জ্বলছে।
প্রতিবাদকারী হ্যাকাররা তাদের নাম দেয় ‘আদালত আলি’ বা ‘আলির বিচার’।
কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর জেরে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অসন্তোষে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতের সময় নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে তিনজনকে হত্যা করার পর টিভি বুলেটিনকে টার্গেট করে এই প্রতিবাদ দেখানো হল।
অভিযোগ রয়েছে যে মাথার চুল ঠিকমতো না ঢাকার অভিযোগ এনে ইরানের নৈতিকতা রক্ষাকারী পুলিশ মিজ আমিনিকে আটক করে। ২২ বছর বয়সী এই ইরানি কুর্দি গ্রেফতারের তিন দিন পর পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন মারা যান ১৬ সেপ্টেম্বর।
হ্যাকিং করা হয় যেভাবে
শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার খবর যখন চলছিল, তখন হঠাৎই খবর প্রচারে বিঘ্ন ঘটানো হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ছবিতে তার মাথা লক্ষ্যবস্তু করে গুলির নিশানা দেখানো হয়, সেইসঙ্গে দেখানো হয় মাহসা আমিনি ও সাম্প্রতিক প্রতিবাদে নিহত আরো তিনজন নারীর ছবি।
একটি ক্যাপশান ছিল এরকম- ‘আমাদের সাথে যোগ দিন, মাথা তুলে দাঁড়ান;’ আরেকটি ক্যাপশানে লেখা হয়- ‘আপনার থাবা থেকে আমাদের তরুণদের রক্ত ঝরছে।’
এই বিঘ্ন স্থায়ী হয় মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তারপরই তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিরুদ্ধে এধরনের বিদ্রোহ ঐতিহাসিকভাবে নজিরবিহীন। কারণ ইরানের ভেতর তিনিই প্রায় সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। কিন্তু মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর তার বিরোধিতা ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি
টিভি অনুষ্ঠান হ্যাক করা ছাড়াও শনিবার সামাজিক মাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসির এক সফরের সময় তেহরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে ‘দূর হন’ বলে স্লোগান দিতে।
শনিবার সকালের দিকে সানান্দাজে দুজনকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে এক ব্যক্তি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করে তার গাড়ির হর্ন বাজানোর পর তাকে গাড়ির মধ্যেই গুলি করা হয়।
অনলাইনে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে আরও দেখা যায় মাশহাদে এক নারীকে গলায় গুলি করা হয়েছে এবং ঐ নারী মাটিতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ইরনার দেয়া খবরে বলা হয়, সানান্দাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন ‘বিপ্লবীদের বিরোধী পক্ষের’ পাল্টা হামলায় এক ব্যক্তি সেখানে নিহত হয়েছে।
শুক্রবার, ইরানের ফরেনসিক মেডিসিন অর্গানাইজেশন বলেছে মাহসা আমিনি মারা গেছেন সেরিব্রাল হাইপক্সিয়া থেকে একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যাবার কারণে। তাদের রিপোর্ট বলছে মাথায় আঘাত থেকে মিজ আমিনির মৃত্যু হয়নি, যে দাবি করছিল মিজ আমিনির পরিবার এবং প্রতিবাদকারীরা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে ১৭ সেপ্টেম্বর ইসলামি প্রজাতন্ত্রটিতে বিক্ষোভ শুরু হবার পর থেকে দেড় শ’র বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে।
ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে দোকান বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তেহরানের বাজার এলাকা, যেখানে একটি পুলিশ চৌকিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে পিছু ধাওয়া করে হঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবাদের ঢেউ তেহরানের বাজার পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়াটা ইরানী নেতাদের জন্য একটা সতর্ক সংকেত ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ তাদের প্রতি সেখানকার ব্যবসায়ীদের বড় সমর্থন তাদের জন্য একটা বিরাট পুঁজি।
সূত্র : বিবিসি