বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার সেই কাজগুলোই হাতে নেয়, যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা হয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, এ কারণে তারা হাওর অঞ্চলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে না। বর্তমান সরকারের সমস্যা হচ্ছে, যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা হয়, কমিশন পায়, লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা বানাতে পারে, সেই কাজগুলোই তারা হাতে নেয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের ফসল তলিয়ে যায়। সেখানকার কৃষি ও কৃষকদের অবস্থা সরেজমিন দেখে আসে কৃষক দলের একটি প্রতিনিধিদল। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ঢলের পানিতে কৃষির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি হাওরের বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
হাওরাঞ্চলের বাঁধ নির্মাণে সরকারের লোকজন পুকুরচুরি করেন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। গত পাঁচ বছরে সেখানকার বাঁধ নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ৬২১ কোটি টাকা, যা বাঁধ রক্ষায় তেমন কাজে আসেনি। বরাদ্দের টাকা আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হরিলুট করেছেন। ফলে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো এতই দুর্বল যে ২৪ ঘণ্টাও পানির চাপ ধরে রাখতে পারেনি।
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে এবার ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি কৃষি নিয়ে বর্তমান সরকারের নীতি ও নির্বাচনের আগে কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিল, তারা বিনা পয়সায় কৃষকদের সার দেবে। ভোট নেওয়ার জন্য তারা এ ধরনের মুখরোচক কথা অনেক বলেছে। এর জন্য তারা প্রথম দিকে কার্ডের ব্যবস্থা করেছে। সেই সারও কিন্তু কৃষকের কাছে পৌঁছায়নি। সেসব কথা দূরে থাক, কৃষকদের যে পাওয়ারটিলার, সেখানেও বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগের লোকদের কার্ডের মাধ্যমে তারা বিনা পয়সায় বিলি করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমে সেভাবে আসে না।’
কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে সরকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ করেন বিএনপি সরকারের সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আজকে কৃষিকাজ অলাভজনক হওয়ায় প্রান্তিক কৃষক এখন রিকশা চালান, ভ্যান চালান। মধ্যকৃষকেরাও কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। এ কারণে খাদ্যশস্যের আবাদ কমছে। তিনি আরও বলেন, এই ভরা মৌসুমে চালের দাম তো বাড়ার কথা নয়। সব রকমের চালের দাম বেড়ে গেছে। তার মানে সমস্যা হচ্ছে পরিকল্পনার।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, আমরা এমন এমন লোককে এমন এমন দায়িত্ব দিই, যাঁরা যে ব্যবসা করেন, তাঁদের সে দায়িত্ব দিই। এখন খাদ্যব্যবসা যাঁরা করেন, তাঁরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন। ফলে যা হচ্ছে, ওখানে ব্যবসাটাই প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে এখন কী হচ্ছে? বড় কৃষকেরা মজুত করছে, ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করছে। কারণ, কিছুদিন পর দাম আরও বাড়বে। এই বিষয়গুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেভাবে সামনে আসে না।’
এ প্রসঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় রাস্তায় আলু ফেলে কৃষকের প্রতিবাদ জানানো, পাকা ধানের খেতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, জমিতে সেচের পানি না পাওয়ায় শেরপুরের কৃষক শফিউদ্দিনের আত্মহত্যা, রাজশাহীতে কৃষক রবি মারন্ডি ও অভিনাথ মারন্ডির কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক দলের পক্ষ থেকে হাওরে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা সুদে বিশেষ ঋণ দেওয়া, ঋণগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ এবং স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখা, হাওরাঞ্চলে শস্যবিমা চালু করা এবং বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিসহ ৮ দফা সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।