অনলাইন ডেস্ক ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২৯,
ইরাকে ফোরাতের পানি ক্রমশ কমছে।ধীরে ধীরে বের হচ্ছে কালের বহু নিদর্শন এবং এটি কেয়ামতেরও আলামত। বিগত কয়েক বছরে ঐতিহাসিক নদীটির বুকে পানির উচ্চতা ১৮ মিটার (প্রায় ৬০ ফুট) কমেছে। চলতি বছর অত্যধিক খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে পানির স্তর দ্রুত নামতে থাকায় বেরিয়ে আসছে হাজার হাজার বছরের পুরোনো স্থাপনা ও নিদর্শন।
সিরিয়ার রাক্কা প্রদেশে ফোরাত নদীতে সম্প্রতি ভেসে উঠেছে এক বিশাল প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্র। রাক্কার উত্তর-পশ্চিমাংশে তাবকা বাঁধের (ইউফ্রেটিস ড্যাম) পূর্ব তীরে সাহল আল-খাশাব থেকে আলেপ্পোর প্রশাসনিক সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত এ সমাধি ক্ষেত্র বাইজান্টিনিয়ান যুগের বলে জানা গেছে।
ইরাক ও সিরিয়া- এই দুই দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ফোরাত নদী। আর তুরস্ক থেকে ইরাকে বয়ে গেছে দজলা নদী। গত তিন বছরে ফোরাতের পানি কমতে কমতে বিপজ্জনক স্তরে নেমে এসেছে। তুরস্কে দজলার বুকে বাঁধ নির্মাণের কারণে ফোরাতের প্রবাহ কমে গেছে বলে অভিযোগ করেন সিরিয়া ও ইরাকের মানুষেরা।
আল আলিয়াওয়ী বলেন, ফোরাত নদীবক্ষ সুমেরিয়ান, আক্কাডিয়ান, অ্যাসিরিয়ান, গ্রিক, বাইজান্টিনিয়ান ও মুসলিম- এই ছয়টি কালের সাক্ষী হয়ে আছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা সমাধির মধ্যে কিছু রয়েছে সিরীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। এখনো পানির নিচে থাকা বহু সমাধি সকালে রোদ ওঠার পর পানি স্বচ্ছ থাকলে দেখা যায়। নদীর ডান তীরে সবকিছু স্পষ্ট। বাম তীরের পাথুরে মাটি খনন সম্ভব হলে বহু প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যাবে।
এর আগে জুলাই মাসে ইরাকের আনবার প্রদেশের আনাহ শহরে ফোরাতের বুকে জেগে ওঠে প্রাচীন নগরী তালবেস। অ্যাসিরিয়ান যুগের শহরটির কারাগার, সমাধিক্ষেত্র ও অন্যান্য স্থাপনার আশেপাশে ঘুরে ছবি-ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করছেন স্থানীয় তরুণরা।
ইরাকি প্রত্নতত্ত্ববিদ মোহাম্মদ জসীম জানান, হাদীথা বাঁধে পানির স্তর কমে যাওয়ায় অন্তত ৮০টি ঐতিহাসিক নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে। বাঁধ নির্মাণের আগে ইতালির একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ সেখানে খনন কাজ চালিয়ে বেশ কিছু কক্ষ আবিষ্কার করেন। এগুলো অ্যাসিরিয়ান আমলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমাধি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাগদাদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত আনাহ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন জনপদ হিসেবে পরিচিত। চার হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো শহরটির কথা উল্লেখ রয়েছে ব্যবিলনিয়ান ও অ্যাসিরিয়ান যুগের লেখনীতে।
গত ৬ জুন ইরাকের কুর্দিস্তানের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাচীন মিত্তানি সাম্রাজ্যের একটি নগর আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। ফোরাত অববাহিকার পানি সরে যাওয়ায় বেরিয়ে আসে ৩ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো শহরটি। দোহুক শহরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক বেচিস প্রিভকানি জানান, ব্যাবিলনিয়ান লিপিতে এ শহরের নাম বলা হয়েছে জাখিকো। এখন পর্যন্ত একটি প্রাসাদসহ কয়েকটি ভবন, বিরাট একটি প্রাচীর ও কিছু কিউনিফর্ম শিলালিপি পাওয়া গেছে।
গত ডিসেম্বরে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলের আজিন শহরে ফোরাতের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় প্রকাশ্যে আসে বাইজান্টিনিয়ান আমলের ঐতিহাসিক হাসটেক দূর্গ। তিন তলা বিশিষ্ট প্রাচীন প্রাসাদটির বিভিন্ন কক্ষের দেওয়ালে গ্রিক লেখা পাওয়া গেছে। নৌকায় চড়ে হাসটেক দূর্গের পাশে ঘুরতে যাচ্ছেন অনেক পর্যটক।
কেয়ামতের অন্যতম একটা আলামত হলো ইরাকের ফোরাত নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়া। ফোরাত নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং এ নিয়ে নাসার গবেষকেরা খুবই উদ্বিগ্ন৷ হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, হযরত মোহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃঅদূর ভবিষ্যতে ফোরাত নদী সোনার ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেবে, সে সময় যারা ওখানে উপস্থিত থাকবে তারা যেনো তা থেকে কিছুই গ্রহন না করে৷
(সহীহ বুখারী, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬০৫)।
প্রিয় নবিজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃসেই পর্যন্ত কেয়মত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না ফোরাত নদী থেকে স্বর্নের পাহাড় বের হবে৷ তার জন্য মানুষ যুদ্ধ করবে, প্রতি একশো জনে নিরানব্বই জন মারা যাবে। যারা জীবিত থাকবে, তারা মনে করবে যে, বোধহয় একা আমিই জীবিত আছি৷
(সহীহ মুসলিম,খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২১৯)।
১২/২/২০১৩ এ একটা রিপোর্টে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, নাসার গবেষকেরা এবং ক্যালফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি লক্ষ করছে, গত ১০বছরে ১১৭লক্ষ একর খাদের পানি শুকিয়ে গেছে৷অর্থাৎ এই নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে কেয়ামতের কয়েকটি আলামতের মধ্যে অন্যতম একটি আলামত৷
ইয়া রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকেই ইসলামের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।