‘প্যালেস অফ পার্লামেন্ট’। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী বাড়ির তকমা পেয়েছে রোমানিয়ার এই আইনসভা ভবন। ভবনটির উচ্চতা বেশি নয়। তবে তার ওজন রেকর্ড গড়েছে।আইনসভার ভবনটি রোমানিয়ায় ‘রিপাবলিকস হাউস’, ‘পিপল্‌স হাউস’ বা ‘পিপল্‌স প্যালেস’ নামেও পরিচিত। রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টের একটি পাহাড়ের উপরে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভারী এই ভবন।

প্যালেস অফ পার্লামেন্টের উচ্চতা ২৭৬ ফুট (৮৪ মিটার)। তবে ভবনটি বেশ চওড়াও। ওই ভবনের বিস্তৃতি প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার বর্গমিটার (৩৯ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গফুট)।

এ ছাড়া, মোট ২৫ লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার ঘনত্ব নিয়ে ‘দিয়ালুল স্পিরি’ নামক পাহাড়ের উপর দণ্ডায়মান প্যালেস অফ পার্লামেন্ট।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, প্যালেস অফ পার্লামেন্টের ওজন। যে কারণে তা রেকর্ড গড়েছে। এই সংসদ ভবনের ওজন প্রায় ৪০৯ কোটি ৮৫ লাখ কিলোগ্রাম। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ভবন এই প্যালেস অফ পার্লামেন্ট।

সবচেয়ে ভারী ভবনের পাশাপাশি আরও একটি রেকর্ডের অধিকারী প্যালেস অফ পার্লামেন্ট। এটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দামি প্রশাসনিক ভবন। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্যালেস অফ পার্লামেন্টের মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি ইউরো। প্রতি বছর এই ভবনে শুধু বিদ্যুৎ বাবদ খরচই হয় প্রায় ৬০ লাখ ডলার।

কমিউনিস্ট রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলেই চাউসেস্কু প্যালেস অফ পার্লামেন্ট তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৪ সালে।

প্রধান স্থপতি অ্যানকা পেত্রেস্কুর তত্ত্বাবধানে ৭০০ স্থাপত্যশিল্পীর ১৩ বছরের চেষ্টায় গড়ে ওঠে প্যালেস অফ পার্লামেন্ট। ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৯৭ সালে।

কী আছে বিশ্বের সবচেয়ে ভারী এই ভবনের অন্দরে? মূলত রোমানিয়ার আইনসভার দু’টি কক্ষ সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটির কাজকর্ম এখানে হয়ে থাকে। এ ছাড়াও প্যালেস অফ পার্লামেন্টে রয়েছে ৩টি জাদুঘর এবং ১টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্যালেস অফ পার্লামেন্টে মোট এক হাজার ১০০টি ঘর থাকার কথা। কিন্তু ভবনটির নির্মাণ সম্পূর্ণ নয়। দু’টি বড় আকারের বৈঠকের ঘর ছাড়া মাত্র ৪০০টি ঘর রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ভবনের মধ্যে।

এই প্রশাসনিক ভবনে মাটির নিচে মোট আটটি তলা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট চাউসেস্কু পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা করেছিলেন। তাই মাটির গভীরে ভবনটি প্রশস্ত করেছিলেন তিনি।

প্যালেস অফ পার্লামেন্ট তৈরি করা হয় রোমানিয়ার নিজস্ব উপাদান দিয়ে। কেবল একটি হলঘরের দরজা রোমানিয়ান প্রেসিডেন্টকে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন তার বন্ধু তথা কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট মোবুতু সেসে সেকো।

এই ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে তিন হাজার ৫০০ ক্রিস্টল, ৪৮০টি ঝাড়বাতি, এক হাজার ৪০৯টি আলো এবং আয়না। দরজা ও জানালা তৈরিতে লেগেছে সাত লাখ টন ইস্পাত আর ব্রোঞ্জ। এ ছাড়া মার্বেল পাথর ও কাঠের ব্যবহারও হয়েছে অফুরন্ত।

স্থপতিরা জানিয়েছেন, পাহাড়প্রমাণ ওজনের কারণে প্রতি দিন একটু একটু করে বসে যাচ্ছে প্যালেস অফ পার্লামেন্ট। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি বছর ছয় মিলিমিটার করে বসে যাচ্ছে রোমানিয়ার এই প্রশাসনিক ভবন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারের কারণে মাটির নিচের পলিতে প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে প্যালেস অফ পার্লামেন্ট। যার ফলে পলিস্তর একটু একটু করে নিচে নামছে। ওই কারণেই দিন দিন বসে যাচ্ছে ভবনটি। প্যালেস অফ পার্লামেন্টের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *