২০২৩ সালের জন্য রেকর্ড ৫১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং এর অংশীদার সংগঠনগুলো। আগামী বছরটিতে কয়েক মিলিয়ন অতিরিক্ত মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউএন গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ওভারভিউ ধারণা করছে, আসন্ন বছরটিতে অতিরিক্ত ৬৫ মিলিয়ন লোকের সহায়তা প্রয়োজন হবে। এতে ৬৮টি দেশে সহায়তা প্রার্থী মোট মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৩৯ মিলিয়নে। এটি বিশ্বের ৪ শতাংশের বেশি বা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় সমান।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) জেনেভায় জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস সাংবাদিকদের বলেন, এটি অভূতপূর্ব এবং হতাশাজনক সংখ্যা। এর অর্থ হলো আগামী বছরটি হতে চলেছে বিশ্বের দেখা সবচেয়ে বড় মানবিক কর্মসূচির।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আফ্রিকার হর্নে খরার কথা উল্লেখ করে গ্রিফিথস বলেন, মানবিক চাহিদা খুবই আশ্চর্যজনকভাবে বেশি, কারণ এই বছরের মারাত্মক ঘটনাগুলো ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রান্তিকের মানুষের জন্য এই আবেদনটি একটি লাইফলাইন।
১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। কারণ সংঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তুচ্যুতির এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলছে, একসঙ্গে চলা দুটি সংকটের কারণে ইতোমধ্যে বিশ্বকে ‘আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে।’
সংস্থাটি জানায়, ৫৩টি দেশে কমপক্ষে ২২২ মিলিয়ন মানুষ এই বছরের শেষ নাগাদ তীব্র খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৪৫ মিলিয়ন অনাহার ঝুঁকির মুখোমুখি হবে।
‘পাঁচটি দেশ ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এবং দুঃখজনকভাবে বলতে পারি, এসব দেশে এর ফলে মানুষ মারা যাচ্ছে’, বলেন গ্রিফিথস।
দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, হাইতি, সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদান। এই বছর তাদের জনসংখ্যার কিছু অংশ ‘বিপর্যয়কর খাদ্য সংকটের’ সম্মুখীন হয়েছে। তবে এখনও দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ৯ মাস যুদ্ধের ফলে খাদ্য রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে এবং ৩৭টি দেশের প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে অনাহারে ভুগছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত বছরের তুলনায় এ বছরের মানবিক সহায়তার আবেদন ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু একাধিক সংকটের কারণে দাতা দেশগুলোর অর্থায়ন ইতোমধ্যে চাপের মধ্যে রয়েছে।
এ বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সহায়তা আবেদনের প্রায় ৫৩ শতাংশ তহবিল সংগ্রহ করা গেছে। ফলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় তহবিল ঘাটতির মুখোমুখি জাতিসংঘ।
সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, সংগৃহীত তহবিল দিয়ে কাদেরকে সাহায্য করা হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে মানবিক সংগঠনগুলো।
সূত্র : আলজাজিরা