২৫ অক্টোবর ২০২২, ৯ কার্তিক ১৪২৮, ২৮ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরি
ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণেও অনেক বিদ্যুৎ ব্যয় হয়৷ সম্পদের প্রকৃত মূল্য,অর্থনৈতিক প্রণালী ও কার্যকলাপের সার্বিক পরিণাম সম্পর্কে নতুন করে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন বাড়ছে৷
গোটা বিশ্বে পরিবহন খাতে বছরে ৮০০ কোটি টনেরও বেশি কার্বন নির্গমন ঘটে৷ অর্থাৎ বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য এই খাত দায়ী৷ সেইসঙ্গে অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসও রয়েছে৷ সেনকেনব্যার্গ সোসাইটির ফল্কার মোসব্রুগার এ বিষয়ে বলেন, খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই বিশাল পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷ একই সঙ্গে কারখানায় উৎপাদন এবং পরিবহন খাতও ওই তালিকায় রয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত আমরা শুধু কারখানার যন্ত্রপাতির বিশাল জ্বালানির চাহিদা কমানোর চেষ্টা করে এসেছি৷ কিন্তু ভবিষ্যতে মোবিলিটির ক্ষেত্রেও জ্বালানির ব্যবহার কমানোর দিকে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে৷ শুধু বড় কারখানাগুলোর দিকে নজর দিলে চলবে না৷
কিন্তু মানুষ নড়াচড়া না করেও জ্বালানি খরচ করে৷ এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বের বিদ্যুতের চাহিদার মাত্র এক শতাংশের উৎস ইন্টারনেট৷ কিন্তু ইন্টারনেট যদি একটা আস্ত দেশ হতো, বিদ্যুতের চাহিদার মাপকাঠিতে সেটি শীর্ষ পর্যায়ে থাকত৷ গোটা বিশ্বে প্রায় সাড়ে চার শ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ সার্চ ইঞ্জিনে মাত্র ২০ বার কোনো কিছুর খোঁজ করলেই এনার্জি সেভিং বাল্বের এক ঘণ্টার সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়৷
ইন্টারনেটের জন্য বিশাল সার্ভার ২৪ ঘণ্টা ধরে চালু রাখতে যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট নোডওয়ের ব্যতিক্রম নয়৷ ফল্কার মোসব্রুগার বলেন, আগামী বছরগুলিতে ইন্টারনেটের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩, ১৪ শতাংশে দাঁড়াবে বলে আমাদের অনুমান৷ অর্থাৎ ব্যাপক আকারে ডিজিটালাইজেশনের কারণে বিশাল মাত্রায় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে৷ শুধু ফাইভজি ও পরে সিক্সজি নেটওয়ার্কের কারণে অভাবনীয় পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে৷
স্মার্ট হোম ও অটোনোমাস ড্রাইভিংয়ের মতো তথ্যনির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়ছে৷ ডিজিটাল বিপ্লব সবে শুরু হয়েছে৷
পৃথিবীর ক্ষতি কিছুটা হলেও কমাতে প্রত্যেকটি মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে৷ তবে বৃহত্তর পরিসরেও পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রণালীর মধ্যে সেটা জরুরি হয়ে উঠছে৷ ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে রাইনহল্ড লাইনফেল্ডার বলেন, মোবাইল ফোনে লিথিয়ামের মতো নানা উপকরণ থাকে৷ সামান্য সোনাও থাকে, যা রিসাইকেল করা হয়৷ এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও উপকরণকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পুনর্ব্যবহারের এক চক্র চালু করা উচিত৷
লাইনফেল্ডারের মতে, আমাদের আসলে এক খাঁটি বৃত্তাকার অর্থনীতির প্রয়োজন৷ ‘বায়োস্ফিয়ার’ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত৷ সূর্যের শক্তি জীবজগত চালু রেখেছে৷ যে জিনিসের আর প্রয়োজন নেই, সেটি পচে যায় এবং তা থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়৷ কিছুই হারিয়ে যায় না৷ যে প্রণালীতে প্রায় সবকিছুর মূল্য টাকার অংকে স্থির করা হয়, সেটি পৃথিবীর কতটা ক্ষতি করছে, মানুষের মধ্যে সেই উপলব্ধি আনা উচিত৷
শুধু জার্মানিতেই কৃষিক্ষেত্র প্রতি বছর ২,১০০ কোটি ইউরো আয় করে৷ অন্যদিকে কৃষিকাজের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার মাত্রা প্রায় ৯,০০০ কোটি ইউরো৷ অর্থাৎ আখেরে বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে৷ মোসব্রুগার এ প্রসঙ্গে বলেন, এমন সব ব্যয় বিবেচনায় ধরাই হয় না, কেউ সেই মূল্য চোকায় না৷ সমাজের সামনে হঠাৎ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমস্যা উঠে আসে৷ অথবা ভূগর্ভস্থ পানিতে নাইট্রেট, ইকোসিস্টেমের মধ্যে ফসফেট নিয়ে হইচই হয়৷ তখন কিন্তু সমাজকে সেই ঠেলা সামলাতে হয়৷ এটা সত্যি বড় এক সমস্যা, যা আমাদের পরিবর্তন করা উচিত৷
আমাদের গ্রহের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এক সার্বিক পরিবর্তন অপরিহার্য৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীর পক্ষে সে কাজ করা সম্ভব হওয়া উচিত৷
সূত্রঃডয়চে ভেলে