অনলাইন ডেস্ক ২২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
সারা রাত তর্কবিতর্কের পর ইইউ নেতারা বর্তমান জ্বালানি সঙ্কটের মোকাবেলা করতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আওতায় ভবিষ্যতে রাষ্ট্রজোট হিসেবে গ্যাস কিনবে ইইউ। বড় সঙ্কটের মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো নিবিড় সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পথে এগিয়েছে।
জাতীয় স্তরে ‘একলা চলো রে’ নীতির বদলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে যে আখেরে সবার লাভ হয়, তা বার বার স্পষ্ট হয়েছে। ফলে একের পর এক বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষমতাও ইইউর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মুখেও ইউরোপের ২৭ সদস্যের এই রাষ্ট্রজোট আবার সেই পথই বেছে নিচ্ছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা ঊর্দ্ধসীমা স্থির করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা ও তর্কবিতর্কের পর তারা গ্যাসের বাজারে সংশোধনমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এক সাংবাদিক সম্মেলনে সেই খবর দিয়ে বলেন, এবার সদস্য দেশগুলোর জ্বালানি মন্ত্রীদের সাথে মিলে কমিশন সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনের খসড়া প্রস্তুত করবে।
এই পদক্ষেপের পাশাপাশি ইইউ আরো একটি জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক গ্যাসের বাজারে সদস্য দেশগুলোর পক্ষে এককভাবে দরকষাকষি করে সুবিধাজনক মূল্য স্থির করা কঠিন হয়ে উঠছে। ফলে এবার যৌথভাবে গ্যাস কেনার পথে এগোবে ইইউ। তবে সেই লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ধার্য গ্যাসের ক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি খতিয়ে দেখা হবে। কারণ ইইউ নেতাদের মতে, সুলভ মূল্যে গ্যাস কিনতে পারলেও অবশ্যই ধাপে ধাপে জ্বালানির ব্যবহার কমানোই মূল লক্ষ্য। সেইসাথে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার ক্ষেত্রে মূল্যের নতুন কাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইইউ নেতারা। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, সম্মিলিতভাবে গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত সহজে কার্যকর করা গেলেও গ্যাসের দাম যাতে ঊর্ধ্বসীমা না ছোঁয়, সেটা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে তর্কবিতর্কের পর এমন ঐকমত্যের ফলে ইইউ নেতারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, বর্তমান জ্বালানি সঙ্কট সম্পর্কে যাবতীয় মতভেদ দূর করে শীর্ষ নেতারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছেন।
গ্যাসের মূল্য কমলে সরবরাহে ঘাটতি ও গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির আশঙ্কা করছিল জার্মানি। অন্যদের চাপে শলৎস সেই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন। তবে তিনি গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেন। স্পেন ও পর্তুগালের সরকার ঠিক সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। ইইউ জ্বালানিমন্ত্রীরা বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শলৎস বলেন, প্রয়োজনে ইইউ নেতারা আবার মিলিত হতে পারেন। শলৎস তার বিরোধিতা প্রত্যাহার করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু জার্মানির আপত্তির কারণে বাজারে গ্যাসের মূল্যের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া জার্মানি জ্বালানি সঙ্কটের মোকাবেলা করতে যেভাবে জাতীয় স্তরে ২০ হাজার কোটি ইউরো ধার্য করেছে, অনেক সদস্য দেশ তার সমালোচনা করছে।