কিয়েভ সফরে গেছেন ইউরোপের সাত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ জোর দিয়ে বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তার সুবিধার জন্য হিম, তুষার এবং বরফকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিপ্রায়ে ছিলেন। শুধু যুদ্ধের ময়দানেই নয়, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও তিনি এটিকে ব্যবহার করছেন।
রোমানিয়ার বুখারেস্টে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনের বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন শীতকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন এবং এটি ভয়াবহ। আমাদের আরো হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ কারণেই ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন বাড়িয়েছে।’
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছয়টি বাল্টিক এবং নর্ডিক দেশের প্রতিপক্ষের সাথে যোগ দিয়েছেন। এটি মূলত রাশিয়া তার পূর্ণ-স্কেল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইউক্রেন সফর করার বৃহত্তম প্রতিনিধিদল। তারা মূলত বৈদ্যুতিক জেনারেটর, গরম কাপড় এবং খাবারের প্রতিশ্রুতি দিতেই এতে যোগ দিয়েছেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ইউক্রেনীয়দেরকে শীতলতম মাসে প্রয়োজনের সাথে মোকাবেলা করতে এবং তাদের সঙ্কল্পকে উচ্চ রাখতে সাহায্য করা।
এস্তোনিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী উরমাস রেইনসালু কিয়েভে বলেছেন, ‘রাশিয়া বেসামরিক শক্তির নিরাপত্তাকে অস্ত্র দিচ্ছে এবং এটি সত্যিই লজ্জাজনক।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার গভীর রাতে সতর্ক করে বলেছেন, রুশ সেনারা নতুন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যতক্ষণ তাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে ততক্ষণ তারা থামবে না।’ কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে তিনি সোমবার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, আসন্ন সপ্তাহটি যতটা কঠিন হতে পারে ততটাই কঠিন হতে পারে। রাশিয়া অক্টোবরের শুরু থেকে প্রায় সাপ্তাহিকভাবে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। প্রতিটি ব্যারাজের ক্ষতির কারণে শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে এর প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছে।
কিয়েভ বলেছে, রাশিয়া স্বীকার করেছে আক্রমণগুলো ইউক্রেনের অবকাঠামো লক্ষ্য করে এবং বেসামরিকদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি তাদের যুদ্ধাপরাধে পরিণত করেছে। তবে মস্কো বেসামরিক নাগরিকদের আঘাত করার উদ্দেশ্য অস্বীকার করেছে। তারা গত সপ্তাহে বলেছে, ইউক্রেন রাশিয়ার দাবির প্রতি সমর্থন না জানালে তাদের দুর্ভোগ শেষ হবে না। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, শহরের ৩০ লাখ লোকের মধ্যে কিছুকে সরিয়ে নিতে হতে পারে যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কম হবে।
কিয়েভে ৭ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরে গেছেন ইউরোপের সাত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সোমবার এ সফরে যান তারা। সেখানে তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠকে মিলিত হন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। আসন্ন শীতের আগেই রাশিয়ার সিরিজ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জেলেনস্কির সাথে বৈঠকের জন্যই এ সফরে যান বাল্টিক ও নরডিক অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
দেশগুলো হলো এস্তোনিয়া, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ে। জেলেনস্কির সাথে বৈঠকে দেশগুলোর মন্ত্রীরা মানবিক ও সামরিক সহায়তা নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়েও আলোচনা হয় তাদের।
বৈঠক শেষে টুইটারে দেয়া পোস্টে এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উরমাস রেইনসালু বলেছেন, রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় ইউক্রেনের অবিলম্বে আরো অস্ত্রের প্রয়োজন। সোমবার রাতের ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপীয় মন্ত্রীদের এই সফর কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থন ও সংহতির বহিঃপ্রকাশ। এই মুহূর্তে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১৬০ জেনারেল, ১৫০০ সামরিক রুশ কর্মকর্তা নিহত : নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে দেড় হাজারেরও বেশি সামরিক কর্মকর্তাকে হারিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। নিহত কর্মকর্তাদের মধ্যে রুশ সামরিক বাহিনীর ১৬০ জেনারেলও রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রুশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রাণহানির এই তথ্য তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ও সর্বজনীনভাবে-প্রাপ্ত অন্যান্য তথ্যকে একত্রিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রুশ সেনা কর্মকর্তাদের প্রাণহানির এই সংখ্যাটি কিলডইনইউক্রেন (করষষবফওহটশৎধরহব) নামক একটি টুইটার হ্যান্ডেলে সঙ্কলিত হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের হতাহতদের বিষয়ে প্রকাশিত রাশিয়ান নিবন্ধগুলো পোস্ট করা হয়ে থাকে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়া এখনো পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট বলছে, চলমান এই যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং নিহতদের মধ্যে রাশিয়ার ১৬০ জন জেনারেল ও কর্নেল রয়েছে। অবশ্য নভেম্বর মাসের শুরুতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেল মার্ক মিলি বলেছিলেন, ইউক্রেনে এক লাখেরও বেশি রাশিয়ান সামরিক কর্মী নিহত বা আহত হয়েছেন। কিয়েভের বাহিনীও সম্ভবত একই রকম হতাহতের শিকার হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
জেনারেল মিলি আরো বলেছিলেন, যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে এবং রাশিয়া বা ইউক্রেনের পক্ষে সামরিক বিজয় অর্জন করা সম্ভব নাও হতে পারে। মিলির ভাষায়, ‘একটি পারস্পরিক স্বীকৃতি থাকতে হবে যে সামরিক বিজয় সম্ভবত প্রকৃত অর্থে সামরিক উপায়ে অর্জন করা যায় না এবং সেই জন্য আপনাকে অন্য উপায়ে ফিরে যেতে হবে।’

খবর : রয়টার্সের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *