২০ জুন ২০২২, ১২:১৮
দেহের জন্য যেমন খাদ্য দরকার, তেমনি অন্তর বা আত্মাকে বাঁচাতেও লাগে বিশেষ খাদ্য। অন্তরের সেই ‘খাদ্য’ই আল্লাহ পাকের ইবাদত। পরিপূর্ণ সুস্থতার সাথে দুনিয়ায় টিকে থাকতে মানুষের জন্য এই দুই প্রকার খাদ্যই নিয়মিত দরকার। দেহের খাবারের সাথে দরকার আত্মার জন্যে নিয়মিত ইবাদত। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, মানুষ বলতে শুধুই একটা দেহ মাত্র নয়। পুরোপুরি মানুষ হতে হলে থাকতে হয় একটা নিবেদিত অন্তরও। অন্তর যেখানে মৃত, সেই দেহ বস্তুত অকেজো। এমন মৃত অন্তর নিয়ে জীবনের সহস্র অর্জনও প্রকৃত অর্থে উপভোগ করা যায় না। এই শ্রেণীর মানুষেরা জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পায় না, জীবনের কোনো মানবিক বোধই থাকে না তাদের মধ্যে। জীবিত হয়েও তারা থাকে মৃতের মতো। কারণ, তাদের জীবিত দেহজুড়ে থাকে মৃত অন্তর। এরাই পা বাড়ায় অনেক সময় আত্মহননের দিকে। এদের আদর্শ উদাহরণ মাইকেল জ্যাকসন ও হুইটনি হিউসটনের মতো বিখ্যাত এবং কথিত সব সফল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের সবই ছিল পার্থিব দৃষ্টিতে। ছিল আকাশ ছোঁয়া অর্থ, যশ ও খ্যাতি; কিন্তু ছিল না মনের শান্তি, ছিল না চিত্তের তৃপ্তি। মৃত অন্তরসর্বস্ব দেহে অবশিষ্ট ছিল না শান্তি-প্রশান্তির স্বস্তিদায়ক অনুভূতিগুলো। সেই স্থান দখল করে নিয়েছিল বিষাদ, হতাশা আর সীমাহীন ক্লান্তি।
অন্তরের প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির জন্য অত্যাবশ্যক যে ইবাদত তা মানুষ নিজের ইচ্ছা মতো বানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে না, যেমন সে পারে না তার ফসলের ফলন নিজের ইচ্ছামতো নির্ধারণ করতে। বস্তুত, জন্মমাত্রই আমরা এগুলো পেয়ে থাকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এতটাই রেডিমেড, যে তার কোনোটাতে কিছুমাত্র পরিবর্তনের চেষ্টাও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জন্য। এ কারণেই নিজেদের বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে যে দু’একটা জিএম, অর্থাৎ ফুড তৈরির চেষ্টা করেছে মানুষ, সেগুলোও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না মানুষের নিজের কাছেই। এতে বুঝা যায়, পৃথিবীতে নিজের ইচ্ছা মতো টিকে থাকার কোনো উপায়ই মানুষের নেই। এখানে থাকতে হলে পরম স্রষ্টা, পালক ও প্রভু আল্লাহ তায়ালার পুরোপুরি অধীনতা মেনেই চলতে হবে। এ ছাড়া কোনো পথ নেই। জিএম ফুডের মতোই অন্তরের খাদ্য যে ইবাদত, তার নিয়ম-কানুন ও পন্থা-পদ্ধতির মধ্যেও নতুন উদ্ভাবন কিম্বা তার মূল সূত্রে কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের অধিকার নেই মানুষের জন্য, সেই ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হয়নি। এ জন্যই আল্লাহ পাকের তৈরি ‘বিশুদ্ধ বা অরগানিক খাবার’ খোঁজার মতোই আমাদেরকে খুঁজতে হবে এবং বুঝতে হবে ইবাদতের বিশুদ্ধ স্বরূপ, নির্দেশনা ও পদ্ধতিগুলোকে। দেহ ও মনের পূর্ণ সুস্থতা নিয়ে বাঁচতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক।
বস্তুত, এ বিষয়ে বিস্তারিতই জানিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং। তার সৃষ্ট খাদ্যভাণ্ডার যেমন অসীম ও অফুরান, তেমনি তার ইবাদতের ভাণ্ডারও অন্তহীন ও অফুরান। মানুষ যেমন এক জীবনে দুনিয়ার সব খাদ্য-শস্য ও ফলমূলের স্বাদ নিয়ে শেষ করতে পারবে না, তেমনি পারবে না এক জীবনে আল্লাহ পাকের দেয়া সব ইদাবত-বন্দেগি অনুশীলন করে শেষ করতে। খাদ্যবস্তুর মতোই ইবাতদের মধ্যেও কিছু রয়েছে নিয়মিত আবার কিছু রয়েছে বিশেষায়িত। সবগুলোই থরে থরে সাজানো রয়েছে পবিত্র আল কুরআন এবং হাদিস শরিফ জুড়ে। সাজানো আছে ব্যবহারিক উদাহরণসহ, যাতে মানুষের পক্ষে তা বুঝতে কোনো অসুবিধা না হয় এবং নিজের জীবনে প্রয়োগ করতেও কোনো কষ্ট না হয়।
আল্লাহর ইবাদতের মূল ভিত্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তার পর যথাক্রমে রয়েছে রোজা, যাকাত ও হজ্জ। এগুলোই ইবাদতের সিলেবাস বা ফরম্যাট। যথা সময়ে নিয়ম মেনে এই ‘সিলেবাস’ অনুশীলন করতে আমরা বাধ্য। তবে নির্ধারিত মাত্রার বাইরেও এই ইবাদতগুলো করা যায় ইচ্ছা মতো, যত খুশি তত এবং তা করেও থাকেন অনেকেই। বস্তুত বাড়তি নামাজ, রোজা ও দান-খয়রাত করা আল্লাহপ্রেমী যেকোনো বুজুর্গের জন্যই একটি নিয়মিত বিষয়। সামর্থ্য থাকলে তারা হজও করে থাকেন একাধিকবার।
আল্লাহর নবীরা সেভাবেই শিখিয়ে গেছেন এবং উৎসাহিত করেছেন মানুষকে আল্লাহ তায়ালার নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতের পথে। তাঁরা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, আল্লাহ পাকের নিরাপদ আশ্রয়ই আমাদের বাঁচার একমাত্র পথ। এ জন্য দরকার নামাজে নিয়মিত যত্নশীল হওয়া; বিপদের সম্ভাবনা মাত্রই হাজতের নামাজের মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া আর নিশ্চিত করা প্রয়োজন ইবাদতময় পরিবেশ। যাদের আস্থা নেই হাদিসের ওপর এবং শ্রদ্ধা নেই ইসলামের সম্মানিত আলেম ও বুজুর্গদের ওপর, তারা নিজেরাই ক্ষতি করছেন নিজেদের। দূরে থাকা দরকার এদের থেকে। অপর দিকে, নিবিড় সম্পর্ক গড়া প্রয়োজন পবিত্র কুরআনের সাথে। এতে আল্লাহ হয়ে যাবেন বন্ধু। যিনি কখনো ছেড়ে যান না। তাই একাকিত্ব বলে কিছু থাকবে না জীবনে। আগ্রহ বাড়বে সার্বক্ষণিক ইবাদতের প্রতি, মিথ্যা ও অন্যায় যাবে দ্রুত, জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে সহজে এবং ইবাদতের সামান্যতম সুযোগও তখন হাতছাড়া করতে চাইবে না অন্তর। এতেই ইনশা আল্লাহ গড়ে উঠবে ইবাদতময় সফল জীবন। আমিন।
লেখক : লস অ্যাঞ্জেলস প্রবাসী
লেখকের বই পেতে : : Search ‘Mainul Ahsan’ at ‘amazon.com’