অনলাইন ডেস্ক। ২৩ জুন ২০২২ ,১২ঃ১৫

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা সহস্রাধিক ছাড়িয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার গভীর রাতে আফগানিস্তানের পাকতিকা ও খোস্ত প্রদেশে এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরো দেড় হাজারের বেশি। বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা ও রয়টার্স।
এক টুইট ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় ভূমিকম্প কেন্দ্র (ইএমএসসি) বার্তায় বলেছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ কম্পন অনুভব করেছেন। তবে পাকিস্তান ও ভারতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইএমএসসি ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬ দশমিক ১ বললেও ইউএসজিএস বলছে ৫ দশমিক ৯।
ভূমিকম্পে আক্রান্ত অনেক এলাকা বেশ প্রত্যন্ত। সেখানকার হতাহতের খবর এখনো কর্মকর্তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকতিয়া এলাকার তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আমিন হুজাইফা বলেন, বিধ্বস্ত স্থানগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে হতাহতদের বের করা হচ্ছে। কেবল এই প্রদেশেই অন্তত এক হাজার লোক নিহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাকতিকা প্রদেশে স্ট্রেচারে করে আহত মানুষকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপ এবং বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ।
স্থানীয় বাখতার নিউজ এজেন্সি জানায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে হেলিকপ্টারে করে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খোস্ত থেকে আনুমানিক ৪৪ কিলোমিটার দূরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্যানুযায়ী এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ ও এর গভীরতা ছিল ৫১ কিলোমিটার।
আফগান সরকারের মুখপাত্র বিলাল কারিমি টুইট করে বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত রাতে পাকতিকা প্রদেশের চার জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। কয়েক শ’ মানুষ হতাহত হয়েছেন। বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।’ তালেবান প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান মোহাম্মদ নাসিম হাক্কানি রয়টার্সকে জানান, নিহতের বেশির ভাগ পাকতিকা প্রদেশের। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে।

আল-জাজিরা থেকে আলি লতিফি কাবুল থেকে জানান, সেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতাধিক বাড়িঘর ধসে গেছে। সেখানে হেলিকপ্টারে করে সহায়তার জন্য লোক পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় সেখানে সাহায্য পাঠানো কঠিন। ভূমিকম্পে নিশ্চিত মৃত্যুর বেশির ভাগই পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশের। এই প্রদেশে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২৫৫ জন নিহত এবং আরো ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইয়ুবি। এ ছাড়া খোস্ত প্রদেশে আরো ২৫ জন নিহত এবং ৯০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় রাত দেড়টার পরপরই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে খোস্ত প্রদেশ; যখন অনেক মানুষ বাড়িতে ছিলেন, বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন। এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, গত আগস্টে বিদেশী সৈন্যদের বিদায়ের পর তালেবান ক্ষমতায় আসায় আফগানিস্তানের সাথে বেশির ভাগ দাতব্য সংস্থার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যে কারণে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা তালেবান সরকারের জন্য বড় ধরনের পরীক্ষা হতে পারে।
আফগানিস্তানের অনেক অঞ্চলে সম্প্রতি বন্যা দেখা দেয়ায় আকস্মিক এই ভূমিকম্প কর্তৃপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যায় ১১ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া অনেক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর আফগানিস্তান যখন তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে, তখনই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। দুই দশকের যুদ্ধ শেষে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ায় গত আগস্টে দেশটির ক্ষমতায় আসে তালেবান। তাদের ক্ষমতা গ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় অনেক দেশ আফগানিস্তানের ব্যাংক খাতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ ছাড়া অনেক দেশ ও সংস্থা আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেছে। তবে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা এখনো দেশটিতে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবিক কল্যাণবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ইউএনওসিএইচএ) বলেছে, মানবিক সংস্থাগুলোকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছে আফগানিস্তান। সংস্থার উদ্ধারকারী দলগুলোকে ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা আন্তর্জাতিক সহায়তায় স্বাগত জানাবে। প্রতিবেশী দেশটিতে সহায়তার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। এর আগে, ২০১৫ সালে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০০২ সালে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রাণ যায় প্রায় এক হাজার মানুষের। এ ছাড়া ১৯৯৮ সালে একই মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার মানুষ নিহত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *