০৮ অক্টোবর ২০২২,২৩ আশ্বিন ১৪২৯, ১১ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরি
নেচার সাসটেইনেবিলিটিতে প্রকাশিত প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিক্সের গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে কার্বন বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ ৪৮ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী ছিল, কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী ধনী ও গরিবদের আয়বৈষম্য বিশ্লেষণ করে একটি নতুন গবেষণা এ দাবি করেছে। গবেষণা আরো বলছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বৃদ্ধির জন্য শীর্ষ ১ শতাংশ নির্গমনকারী দায়ী ছিল, আর ১৬ শতাংশ মানুষের কারণে অর্ধেক কার্বন নির্গমন ঘটে।
গত সপ্তাহে নেচার সাসটেইনেবিলিটি জার্নালে প্রকাশিত, ‘১৯৯০-২০১৯ সালের বৈশ্বিক কার্বন অসমতা’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিক্সের বিশ্ব বৈষম্য ল্যাবের ফরাসি অর্থনীতিবিদ লুকাস চ্যান্সেল লিখেছেন। এতে মাথাপিছু উচ্চ নির্গমনকে সম্পদের উচ্চ পরিমাণের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। গ্রিনহাউজ গ্যাস পদচিহ্নের মডেলের সাথে ওয়ার্ল্ড ইনইক্যালিটি ডাটাবেজ থেকে আয় বা সম্পদ বৈষম্যের ডেটা একত্রিত করে; দেখা গেছে যে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখলেও তারা সমানভাবে তা করে না।
‘ব্যক্তিগত কার্বন ফুটপ্রিন্ট’- সমীক্ষা অনুসারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গার্হস্থ্য খরচ এবং আর্থিক বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি ব্যয় থেকে নির্গমন গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি দেখায় যে ‘বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের মাধ্যমে উৎপন্ন নির্গমনের বেশির ভাগই তাদের খরচের পরিবর্তে তাদের বিনিয়োগ থেকে আসে। গবেষক বলছেন, ব্যক্তিরা কার্বন গ্রহণ করতে পারে, তবে তারা কার্বন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর মালিকানাও (এবং বিনিয়োগ করতে পারে), চ্যান্সেল জলবায়ুকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট কার্বন ব্রিফকে বলেছেন, এ গবেষণাটি ‘একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করছে, যা এই বিভিন্ন বিটকে একীভূত করতে চলেছে। আমাদের কার্বন পদচিহ্ন বা কার্বন নিঃসরণে আমাদের ভূমিকাকে একসাথে পরিমাপ করতে।’
কার্বন নির্গমনে বিনিয়োগের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি সতর্ক করে বলেন, আমি জোর দিয়েছি যে এই কার্বন নিঃসরণের সংখ্যাগুলোকে যতœসহকারে ব্যাখ্যা করা উচিত। এ ইস্যুতে সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ ডেটার অভাব এবং এ ছাড়াও বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা লোকেরা অনুসরণ করতে চায়। যা কার্বন পদচিহ্ন পরিমাপ করতে সহায়ক।
অধ্যয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো- ২০১৯ সালে গড় বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু নির্গমন ৬ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য। ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড-সমতুল্য’ হলো গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন গণনার জন্য একটি আদর্শ একক। এ শতাব্দীর মধ্যকাল পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে এখন থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে মাথাপিছু নির্গমন ১.৯ টন এবং তার পর শূন্যে নামতে হবে। ১.৯ টন বার্ষিক মাথাপিছু নির্গমন হার লন্ডন ও নিউ ইয়র্কের মধ্যে একটি অর্থনীতি-শ্রেণীর রাউন্ড-ট্রিপ ফ্লাইটের সমতুল্য হিসেবে দেখছে গবেষণাটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাব অপরিবর্তনীয় হবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
যদিও উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ আজ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী এবয় বৈশ্বিক ঐতিহাসিক নির্গমনের সবচেয়ে বড় অবদানকারী, অঞ্চলগুলোর মধ্যেও মাথাপিছু গড় নির্গমনে বৃহত্তর অসমতা দেখা দিয়েছে। ১৯৯০ সালের পরিস্থিতির বিপরীতে, স্বতন্ত্র নির্গমনে বৈশ্বিক বৈষম্যের ৬৩ শতাংশ এখন দেশগুলোর মধ্যে নয়, বরং দেশগুলোর মধ্যে কম ও উচ্চ নির্গমনকারীদের মধ্যে ব্যবধানের কারণে ঘটছে। পূর্ব এশিয়ায় দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ প্রতি বছর গড়ে ২.৯ টন কার্বন নির্গত করে, যেখানে মধ্যবর্তী ৪০ শতাংশ প্রায় ৮ টন এবং শীর্ষ ১০ শতাংশ প্রায় ৪০ টন নির্গত করে, যা গবেষণায় দেখা গেছে।
উত্তর আমেরিকায় নিচের ৫০ শতাংশ মানুষ ১০ টনের কম, মধ্যবর্তী ৪০ শতাংশ ২২ টন এবং শীর্ষ ১০ শতাংশ ৬৯ টনের কাছাকাছি কার্বন নির্গত করে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে কম’ কার্বন নির্গমন রয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, নিচের ৫০ শতাংশের জন্য কার্বন নির্গমন প্রায় ১ টন এবং শীর্ষ ১০ শতাংশের জন্য গড়ে ১১ টন। গবেষণাপত্রের বিশ্লেষণ অনুসারে ইউরোপ ও আমেরিকার দরিদ্রতম ৫০ শতাংশের নির্গমন ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ কমেছে, যেখানে শীর্ষ ১০ শতাংশ নির্গমন তুলনামূলক প্রভাবিত হয়নি বা এমনকি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্রঃদ্য প্রিন্ট