০৯ অক্টোবর ২০২২, ২৪ আশ্বিন ১৪২৯, ১২ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরি

ছবি সংগৃহীত

যাকে সৃষ্টি না করলে ত্রিভুবনের কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করতেন না তিনি আমাদের প্রিয় নবী (সা.)। রসুল (সা.)-এর শান-মানের উচ্চতা-গভীরতা কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করা অসম্ভব। হুজুর (সা.)-এর শান সম্পর্কে আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ওয়ারাফানা লাকা জিকরাক। হে হাবিব! আপনার শান আমি বাড়িয়ে দিয়েছি। ’এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে আবু সাউদে মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুসতফা উমাদি (রহ.) লেখেন, ‘অন্তত আটভাবে আল্লাহতায়ালা হুজুর (সা.)-এর জিকিরকে উঁচু করেছেন। যত জায়গায় আল্লাহর জিকির হয় তত জায়গায়ই হুজুর (সা.)-এরও জিকির হয়।

যেমন কলমা শাহাদাত, আজান, ইকামত ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের সঙ্গে হুজুর (সা.)-এর আনুগত্যও ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ নিজে হুজুর (সা.) -এর ওপর সালাত পড়েন। তিনি ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন রসুল (সা.)-এর ওপর সালাত পড়ার জন্য।

মোমিনরাও তাঁর ওপর সালাত পড়ে। আল্লাহ হুজুরের নাম রেখেছেন রসুলুল্লাহ ও নবীউল্লাহ। ’(তাফসিরে আবু সাউদ, নবম খন্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠা)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন,‘তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, হে হাবিব! আমি আপনার মর্যাদা এতই সমুন্নত করেছি যে আপনার জিকির ছাড়া আমার জিকির সম্পূর্ণ হয় না। যেমন কলমা শাহাদাত, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ। ’ মুফাসসির কাতাদা (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ হুজুরের সম্মান বাড়িয়েছেন দুনিয়া-আখেরাত দুই জগতেই।
এমন কোনো মুসলমান নেই যে কলমা শাহাদাত পাঠক করল কিন্তু রসুলের জিকির করেনি এবং এমন কোনো নামাজি নেই যে আল্লাহ ও রসুলের জিকির না করেই সালাত শেষ করে। ’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, অষ্টম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা) আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) লেখেন, ‘হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, একদিন জিবরাইল আমার কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর বন্ধু! আপনি কি জানেন কীভাবে আল্লাহ আপনার মর্যাদা বাড়িয়েছেন? আমি বললাম, আল্লাহই ভালো জানেন। জিবরাইল বললেন, আল্লাহ বলেছেন, ইজা জুকিরতু জুকিরতা মায়ি। হে হাবিব! পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমার জিকির হবে, সঙ্গে আপনারও জিকির হবে। এভাবেই আপনার জিকির সমুন্নত করেছি। (ইমাম সুয়িতি আরও বলেন,) এ আয়াত প্রমাণ করে যে কোনো খুতবা এবং জানাজার নামাজে হুজুর (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া ওয়াজিব। ’ (আল ইকলিলু ফি ইসবাতিত তানজিল, প্রথম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা)
আমাদের প্রতি রাসূল (সা.)-এর দয়া মায়া ভালোবাসা

উম্মতের প্রতি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ছিল অতুলনীয় ভালোবাসা। উম্মতের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন : ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্নে কষ্ট পান, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সূরা তাওবা : ১২৮)। আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে আরো বলেন : ‘তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকে এক মহামর্যাদাবান রাসূল যিনি তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপথগামী হওয়ার খুবই উদ্বিগ্ন এবং সৎকর্মের প্রতি ধাবমান হওয়ার বড়ই আশাবান। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল দয়ালু’। (সূরা তাওবা : ২২৮)। উম্মতের প্রতি নবী (সা.)-এর ছিল অতুলনীয় ভালোবাসা। উম্মতের প্রতি নবী (সা.)-এর ভালোবাসার কথা আল্লাহ্ বর্ণনা করেছেন কুরআনের বিভিন্ন জায়গায়।

নবী (সা.) দোয়ার সময় সর্বদা উম্মতের কথা স্মরণ করতেন। সবার জন্য তাঁর মন থাকত ব্যাকুল। তাই প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পর উম্মতের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তিনি। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসূল (সা.)-এর অন্তর প্রসন্ন দেখলে আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন।’ তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আয়েশার আগে ও পরের, গোপন ও প্রকাশ্যে করা গুনাহ ক্ষমা করুন।’ রাসূল (সা.)-এর দোয়া শুনে আয়েশা রা. হেসে নিজের কোলে মাথা নিচু করে ফেলতেন। তাঁর হাসিমাখা মুখ দেখে রাসূল (সা.) বলতেন, ‘আমার দোয়াতে কি তুমি আনন্দিত হয়েছ?’ আয়েশা রা. বলতেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এটা কেমন কথা, আপনার দোয়ায় আমি আনন্দিত হব না?’ তখন রাসূল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহর শপথ, এভাবেই আমি প্রত্যেক নামাজের পর আমার উম্মতের জন্য আমি দোয়া করি।’ (ইবনে হিব্বান : ৭১১১)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সব নবীর এমন কিছু দোয়া আছে, যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সব নবী দ্রুত নিজেদের জন্য দোয়া করেছে। আমি তা কিয়ামতের দিন উম্মতের সুপারিশের জন্য গোপন করে রেখেছি। আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে ইনশাআল্লাহ আমার সুপারিশ লাভ করবে।’ (মুসলিম : ১৯৯)।
আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইবরাহিম (আ.)-এর কথা তিলাওয়াত করলেন, ‘হে আমার রব, তারা অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, তাই যারা আমার অনুসরণ করবে তারা আমার দলভুক্ত, আর যারা আমার অবাধ্য হবে (তাদের ব্যাপারে) আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৬)। আর ঈসা (আ.) বলেছেন, আপনি তাদের আজাব দিলে তারা আপনার বান্দা, আর ক্ষমা করলে আপনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা : ১১৮)।

অতঃপর রাসূল (সা.) দুই হাত তুলে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মত! আমার উম্মত!’ আল্লাহ তায়ালা বললেন, ‘হে জিবরাইল, মোহাম্মদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, আপনি কাঁদছেন কেন?’ মহান আল্লাহ সব কিছুই অবগত আছেন। জিবরাইল (আ.) এসে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল (সা.) তাকে নিজের কথা বললেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে জিবরাইল, তুমি মোহাম্মদের কাছে গিয়ে বলো, আমি শিগগির আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করব এবং আমি আপনাকে কষ্ট দেবো না।’ (মুসলিম : ২০২)

আমরা মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। আর মোহাম্মদ (সা.) উম্মতের সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। উম্মতের ক্ষতিকর বিষয়সমূহ হলো যে, তার বিপথগমিতা, ত্রুটিমুক্ত আমল, পার্থিব জীবনে সুখময়ভাবে জীবন পরিচালনা করা, পরকালীন যাবতীয় ক্ষতিকর ও অনিষ্টকর বিষয় থেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন সারা জীবনভর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *