পদ্মা পার হতে লাগবে

নিজস্ব প্রতিবেদক ২৬ জুন ২০২২, ২৩:০০

প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে আর কোনো দুর্ভোগ নয়। ঘাটে ঘাটে আর যাত্রীদের ৮-১০ ঘণ্টার অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না। আসন্ন ঈদে বাড়ি ফেরায় থাকবে না বাড়তি ঝক্কি ঝামেলা। সেতুতে মাত্র ৩ সেকেন্ডেই টোল দিয়ে মাত্র ৬ মিনিটেই পদ্মা পাড়ি দিতে পারবে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ। এর আগে গত ১২ জুন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাওয়ায় বলেছিলেন, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৬ মিনিট।
বিগত বছরগুলোতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-চরজানাজাত (পুরনো) ও শিমুলিয়া-মঙ্গল মাঝিকান্দি নৌরুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নদী পার হতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক সময় পার হয়ে যায় সারা দিনও। ঈদ ও উৎসবের দিনে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার দিন অবশেষে শেষ হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাচ্ছে প্রায় ৪০ বছরের পুরনো এসব ঘাটের দৃশ্য। চরম দুর্ভোগের শিকার হওয়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-চরজানাজাত (পুরনো) ও শিমুলিয়া-মঙ্গল মাঝিকান্দি নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীদের কাছে স্বপ্নের এ সেতু যেন এখন নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
জানা গেছে, বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পুরনো ও পরিত্যক্ত মাওয়া ঘাট স্থানান্তর করে শিমুলিয়ায় চালু করা হয় ফেরি ও লঞ্চ ঘাট। পরিত্যক্ত মাওয়া ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে শিমুলিয়া এলাকায় ঘাট চালু হতে না হতেই মাওয়া চৌরাস্তা থেকে শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘাটে ঘাটে আটকে পড়া যানবাহনের হাজার হাজার যাত্রী শীতের দিনে কনকনে শীত আর গরমকালে তীব্র গরমে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে থাকতেন। এই পথে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পারাপার হলেও দুর্ভোগের এ চিত্র ছিল নিত্যনৈমিত্তিক।
পদ্মা সেতু চালু হলে পরদিন থেকেই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। এর ফলে শিমুলিয়া মাঝিকান্দি ঘাটে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে যাত্রী এবং যানবাহনের চাপ কমে যাবে। এতে পাল্টে যাবে মানুষের দুর্ভোগের চিরচেনা দৃশ্য। কমবে ঘাটগুলোতে যাত্রী ও যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়। বেঁচে যাবে সময়। তবে সেতুকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসা বিপুল মানুষের সমাগম থাকবে। এতে লঞ্চ, স্পিডবোটগুলো আগের মতো চালু থাকবে। আর ফেরি থাকবে জরুরি প্রয়োজনে।
এ দিকে বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, সেতু চালু হলেও জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে চারটি ফেরি সার্বক্ষণিক এখানে থাকবে। তবে এ রুটে এখন মোট আটটি ফেরি রয়েছে।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা গ্রামের লিমা আক্তার বলেন, আগে আমার পরিবারের কোনো রোগীকে রাতের বেলা মাঝিকান্দি ঘাট থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট করতে হতো। এখন পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের এই কষ্ট ও দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
মাদারীপুরের বাংলবাজার এলাকার ফারুক ফকির জানান, সেতু চালু হলে আমরা আনন্দিত। এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে। সেতু চালু হলে উন্নয়ন হবে। আমাদের ভাগ্যের বদল হবে। এ ছাড়া আমাদের এ এলাকার জায়গা জমির মূল্য অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীরা জানান, এত দিন ধরে ঘাটে ঘাটে তীব্র যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। রোগী নিয়েও ফেরিঘাটে এসে হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে পড়ে কতই না দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঘাটের এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে একমাত্র সেতুটিই আশা ভেবেছিলাম। কাল (আজ) প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করলে শেষ হবে আমাদের প্রতীক্ষার প্রহর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *