২৫ অক্টোবর ২০২২, ৯ কার্তিক ১৪২৮, ২৮ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরি
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। দেশটির রাজা চার্লস ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এক বছরের মধ্যে তিনি হলেন ব্রিটেনের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি হলেন গত দুই শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী।
সরকার গঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম ভাষণে সুনাক প্রতিশ্রুতি দেন যে তার কাছে রাজনীতির চেয়ে দেশের প্রয়োজনটাই প্রধান্য পাবে।
তিনি বলেন, তিনি ‘প্রয়োজনগুলোকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে’ দেশকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। বলেন, তিনি এমন একটি সরকার গড়বেন যা ‘দলের সেরা প্রতিনিধিত্ব করবে।’
সুনাকের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কেউই দলের বেঁধে দেওয়া ১০০ জন এমপির সমর্থন পাননি। তাই কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচিত হতে তাকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। অত্যন্ত মসৃণভাবে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন ঋষি।
কিন্তু যতটা সহজে এবার তিনি দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন, সে ভাবেই কি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফল হতে পারবেন? সোমবার থেকে এই প্রশ্নটাই যুক্তরাজ্য ঘুরপাক খাচ্ছে। তার কারণ, রীতিমতো কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসছেন ঋষি। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির হাল খুবই খারাপ।
প্রথমে করোনা, তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব চাপ পড়েছে। তা মন্দার দিকে চলে যেতে পারে। রাশিয়া থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস ও তেল না আসায় এনার্জি-সংকটে ভুগছে গোটা ইউরোপ। দেশে বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। তাতে মানুষ ক্ষিপ্ত। মুদ্রাস্ফীতিতে নাকাল মানুষ। এই সংকট মেটাতে পারেননি বলেই ৪৬ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লিজ ট্রাস।
এই বছরে ঋষি হবেন রক্ষণশীল দলের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। ফলে তার দলের মধ্যেও বিভাজন, অশান্তি বাড়ছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ঋষির জন্য একেবারেই আদর্শ নয়। আবার এটাও সত্যি, এই ধরনের পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোতে পারেন একজন নেতা।
ঋষি যা বলেছেন
নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর দলের নেতাদের ঋষি বলেছেন, তার প্রথম কাজ হলো দেশ ও দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি এই কাজ করবেন।
এমপি সাইমন বলেছেন, সুনাক জানিয়েছেন, খুবই কঠিন সময়ের মোকাবিলা করতে হবে। তবে নির্বাচন এগিয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পরে দুই মিনিটের টিভি ভাষণে তিনি বলেন, আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করব। দেশ এখন একটা ভয়ংকর কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেই সময়ে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য লিজ ট্রাসকে ধন্যবাদ জানাই।
দলের নেতারা যা বলছেন
কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান জ্যাক বেরি বলেন, ঋষির সঙ্গে আমরা সর্বতোভাবে আছি। লিজ ট্রাসের সময়টা যে খুবই টালমাটাল, সেটা তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
দলনেতা নিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে পেনি মরডান্ট লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ঋষি আমার পুরো সমর্থন পাবেন। এটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত দেখিয়ে দিচ্ছে, আমাদের দলের বৈচিত্র আছে এবং অঢেল প্রতিভা আছে।
এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও জানিয়েছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পক্ষে এটা ঠিক সময় নয়।
কিন্তু বিরোধীদের দাবি, ঋষিকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য জনগণ ভোট দেননি।
ঋষির সময়
যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী নির্বাচন হবে। ততদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন ঋষি। ততদিন পর্যন্ত তিনি কাজ করার সময় পেতে পারেন।
এর আগে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি করোনার সময় দেশের অর্থনীতির হাল ধরেছিলেন। ওই সময় সাধারণ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, টিকা দেওয়ার কর্মসূচি, আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার কাজ করেছিলেন তিনি। ফলে তার সেই অভিজ্ঞতা আছে।
দুই শ’ বছরে
গত দুই শ’ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ঋষি সুনাকই যুক্তরাজ্যের প্রথম ব্রিটিশ এশিয়ান প্রধানমন্ত্রী হবেন। যে ব্রিটেন প্রায় দুই শ’ বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিল, এবার সেখানে শাসন করবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি।
ঋষির পূর্বপুরুষরা পাঞ্জাব থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। ব্রিটিশ শাসনে তার পূর্বপুরুষ প্রথমে নাইরোবি যান। সেখান থেকে যুক্তরাজ্য।
ঋষি আবার বিখ্যাত ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পপতি নায়ারণমূর্তির জামাতা। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মাজেমধ্যেই তিনি বেঙ্গালুরুতে যান।
এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন ঋষি। এ ছাড়া কিছুদিন আগেই জন্মাষ্টমী পালন করেছেন। জনসন প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় গত বছর ডাউনিং স্ট্রিটে দীপাবলি পালন করেছিলেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি ,ডয়চে ভেলে