জনসংখ্যা নিয়ে ভারত সরকারের নতুন জরিপ বলছে, দেশটির জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হার উন্নত হয়েছে। তবে ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনো ছেলেসন্তান চান। খবর বিবিসির।
জনসংখ্যা নিয়ে ভারত সরকারের নতুন জরিপ বলছে, দেশটির জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হার উন্নত হয়েছে। তবে ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনো ছেলেসন্তান চান। খবর বিবিসির।
ভারতের সামাজিক প্রথা অনুসারে, ছেলেসন্তানেরা বংশগত উপাধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে কন্যাসন্তানেরা বিয়ের পর অন্য পরিবারে চলে যান। তাঁদের বিয়েতে যৌতুক দিতে হয়। এসব কারণে ছেলেসন্তানের আকাঙ্ক্ষা বেশি।
জরিপ পরিচালনাকারীরা বলছেন, এ ধরনের মনোভাবের জন্য ভারতের জনসংখ্যায় নারীর তুলনায় পুরুষের আনুপাতিক হার বেশি। এটি ভারতের জন্য লজ্জার। ভারতের জনসংখ্যা জরিপ বলছে, প্রায় ১০০ বছর ধরে দেশটিতে নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি। ২০১১ সালে পরিচালিত সর্বশেষ জরিপ অনুসারে প্রতি ১ হাজার পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা ৯৪০। একই বছর প্রতি ১ হাজার ছেলেশিশুর বিপরীতে মেয়েশিশুর সংখ্যা ৯১৮। জনসংখ্যায় নারী কম থাকার কারণে ভারতের সমালোচনা করেন সমালোচকেরা।
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের জরিপ পরিচালিত হয়। এতে আগের বছরের তুলনায় ভারতের জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হারে উন্নতি দেখা গেছে। জরিপে এই প্রথমবারের মতো ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
তবে ওই জরিপ বলছে, ভারতীয় সমাজে এখনো পুরুষের প্রাধান্য রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ শতাংশ নারী বলছেন, তাঁরা মেয়েসন্তানের চেয়ে ছেলেসন্তান বেশি চান। ২০১৫-১৬ সালে জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৮.৫ শতাংশ নারী ও ১৯ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তাঁরা ছেলেসন্তান বেশি চান। অর্থাৎ ছেলে বা মেয়েসন্তান নিয়ে মনোভাবে কিছুটা বদল এসেছে। অনেক দম্পতি ছেলেসন্তানের আশায় একের পর এক মেয়েসন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। তবে এখন এ ভাবনায় বদল এসেছে।
ভাবনায় বদল
৩২ বছর বয়সী ইন্দ্রানী দেবীর তিনটি মেয়েসন্তান। দিল্লিতে গৃহকর্মীর কাজ করেন ইন্দ্রানী। বিবিসিকে তিনি বলেন, তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ পরিবার চেয়েছিলেন। তবে ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল আলাদা। তাই তাঁর তিন সন্তানই মেয়ে।
তবে এখন আর মেয়ের আশায় একের পর এক সন্তান নিতে চান না ইন্দ্রানী দেবী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী একজন বাসচালক। আমরা আর সন্তানের ভরণপোষণ করতে পারব না।’
ইন্দ্রানী দেবীর মতো ৬৫ শতাংশ বিবাহিত নারী, যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, তাঁদের দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। তবে কোনো ছেলেসন্তান নেই। এই ৬৫ শতাংশ বিবাহিত নারী বলেছেন, তাঁরা আর কোনো সন্তান চান না। ছয় বছর আগে এ রকম ইচ্ছা পোষণ করেন, এমন বিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ৬৩ শতাংশ।
ছেলেদের তুলনায় বেশি মেয়েসন্তান চান, এমন মা-বাবার সংখ্যা ২০১৫-১৬ সালে ছিল ৪.৯৬ শতাংশ।
এই হার বেড়ে ৫.১৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এ হার খুব কম হলেও এটা বোঝা যায়, অন্তত কিছু ভারতীয় মা-বাবা রয়েছেন, যারা ছেলের তুলনায় মেয়ে বেশি চান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে প্রজননের হার কমে যাওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে।
নগরায়ণ, নারী সাক্ষরতার হার বেড়ে যাওয়া, জন্মনিরোধকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া—এসব কারণে ভারতে প্রজনন ২ শতাংশ। এ হার আরও কমে গেলে ভারতের জনসংখ্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করবে।
১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে প্রজননের হার এভাবে কমাটা খুব বেশি উদ্বেগের হবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ জনসংখ্যার বৃদ্ধির জন্য ভারতকে লিঙ্গের আনুপাতিক সমতা বজায় রাখতে হবে।