অনলাইন ডেস্ক ০৫ অক্টোবর ২০২২, ২০ আশ্বিন ১৪২৯, ৮ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরি

ছবি সংগৃহীত

২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন ভারতের ফ্যাক্ট-চেক বা সত্য অনুসন্ধানমূলক খবরের ওয়েবসাইট ‘অল্ট নিউজ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সাহসী সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের।

বুধবার টাইমস ম্যাগাজিনের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এই খবর জানিয়েছে। পত্রিকাটি আরো জানায়, ‘অল্ট নিউজ’-এর আরেক প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহার নামও আছে সেই তালিকায়।

টাইম ম্যাগাজিন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বারের সম্ভাব্য নোবেল প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের এই দুই সাংবাদিক। প্রতি বছরই নোবেল শান্তি বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে নরওয়ের ‘পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো’। তাদের কাছে নাম প্রস্তাব করে পাঠায় বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান। জুবায়ের এবং সিনহা যে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার লড়াইতে আছেন,সে খবরটাই জানালেন নরওয়ের আইনসভার সদস্যরা।

এ বছর ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ৩৪৩টি নাম নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার লড়াই চলছে।নোবেল কমিটির তরফ থেকে অবশ্য কখনো সম্ভাব্য নোবেল প্রাপকদের নাম প্রকাশ্যে আনা হয় না। কিন্তু সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে দাবি করা হয়েছে,এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার লড়াইয়ে জুবায়ের, প্রতীক ছাড়াও রয়েছেন ঘোষক ডেভিড অ্যাটেনবরো, পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করে সাড়া ফেলে দেয়া গ্রেটা থুনবার্গ, পোপ ফ্রান্সিস, টুভালুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোফে, এনমকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কিও। আগামী ৭ অক্টোবর নরওয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হবে।

এদিকে,চলতি বছরের জুন মাসেই ২০১৮ সালের টুইটের মাধ্যমে প্ররোচনা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে জুবায়েরকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। জুবায়েরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ তোলা হয়। তাকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সরব হয় দেশ বিদেশর বহু সংগঠন।

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আমেরিকার একটি অলাভজনক সংগঠন বিবৃতি প্রকাশ করে বলে, ‘ভারতে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ক্রমশ কমে আসছে। ধর্মীয় কারণে সরকার সাংবাদিকদের সামনে এমন পরিবেশ তৈরি করছে, যা তাদের জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর এবং অসুরক্ষিত।’ এক মাস তিহাড় জেলে বন্দী থাকার পর দেশের শীর্ষ আদালত জুবায়েরকে জামিন দেয়ার নির্দেশ দেয়।

কে এই জুবায়ের, কেন তিনি আলোচনায়?
মোহাম্মদ জুবায়ের ভারতের নেতৃস্থানীয় ফ্যাক্ট-চেকিং (সত্যানুসন্ধান) ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তার এই প্রতিষ্ঠান ভুয়া খবর ও মিথ্যা দাবির অসারতা উদ্‌ঘাটনে বিরামহীনভাবে কাজ করে গেছে; যেসব খবর ও দাবির অধিকাংশের পেছনে আছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থী বিভিন্ন গ্রুপ। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রোষানলে ছিলেন তিনি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মোদি সরকার যেসব কূটনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, সেসবের একটির মুখোমুখি হয় গত কয়েক মাস আগে। সর্বশেষ এ সংকটের শুরু মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা: ও তাঁর স্ত্রী হজরত আয়েশা রা:-কে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র (বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার মুখে সাময়িক বরখাস্ত) নূপুর শর্মা ও শীর্ষ পর্যায়ের আরেক বিজেপি নেতার অবমাননাকর মন্তব্যকে ঘিরে।

সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম টুইটারে সাংবাদিক জুবায়েরের অনুসারীর সংখ্যা পাঁচ লাখের (আধা মিলিয়ন) বেশি। সম্ভবত তিনিই প্রথম সাংবাদিক, যিনি কোনো সংবাদ চ্যানেলে নূপুর শর্মার টেলিভিশন বিতর্কের একটি ক্লিপ শেয়ার করেন। ওই বিতর্কেই মহানবী সা:–এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন নূপুর।

মহানবী সা:–কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার সুযোগ দেয়ায় ওই টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিকপক্ষ ও অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের সমালোচনা করেন মোহাম্মদ জুবায়ের। তবে সেখানে তিনি নূপুর শর্মার নাম উল্লেখ করেননি।

পরে আল-জাজিরাকে জুবায়ের বলেন,‘আমি ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের ওপর বেশি চটেছিলাম। কারণ, তিনি তাকে (নূপুর শর্মা) কথা বলা সুযোগ করে দিয়েছেন। যখন অবমাননাকর মন্তব্য করা হলো,তাকে থামানো হয়নি। আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। এ কারণেই (উপস্থাপকের ওপর বেশি রাগ হওয়ায়) যখন আমি টুইট করেছিলাম, নূপুর শর্মার নাম উল্লেখ করিনি বা তার টুইটার অ্যাকাউন্ট সামনে আনিনি।’

মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন,‘আমি তাদের (বিতর্কের আয়োজক নিউজ চ্যানেলের মালিকপক্ষ ও উপস্থাপিকাকে) সামনে আনতে (মুখোশ উন্মোচন করতে) চেয়েছিলাম। আসলে আমার লক্ষ্য ছিল ওই নিউজ চ্যানেল।’

মহানবী সা:-কে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যকে ঘিরে যখন মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভারতের বড় ধরনের কূটনৈতিক সংকট দেখা দেয়, তখন বিজেপির অনেক সমর্থক জুবায়েরকে গ্রেফতার করার দাবি তোলেন। টুইটারে ‘অ্যারেস্ট জুবায়ের’ হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে দেখা যায়।

অপরদিকে জুবায়েরের ছড়িয়ে দেয়া বিজেপি নেতা-নেত্রীর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তাদের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানায় উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) সদস্যসহ এক ডজনের বেশি মুসলিম দেশ। এই দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক বেশ মজবুত। চাপের মুখে বিজেপি বাধ্য হয়ে এক বিরল বিবৃতি জারি করে। তাতে বলা হয়, ‘তারা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

সূত্র : আনন্দবাজার ও আলজাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *