অনলাইন ডেস্ক ৩০সেপ্টেম্বর ২০২২,১০:৫১
আটকানো যাচ্ছে না ভারতীয় মুদ্রা রুপির দামের পতন। সোমবার আরো তলিয়ে গিয়ে রেকর্ড নিচে নামল ভারতীয় মুদ্রা। ৫৮ পয়সা বেড়ে ডলার এই প্রথম পৌঁছল ৮১.৬৭ রুপির। গত চারটি লেনদেনে ডলার উঠেছে মোট ১৯৩ পয়সা। আমেরিকা ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোর পরেই বৃহস্পতি ও শুক্রবার যথাক্রমে তা ৮০ এবং ৮১ রুপি ছাড়ায়। এখন ৮২ রুপি হওয়া সময়ের অপেক্ষা, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
এ নিয়ে ভারতের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ফের আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। কিভাবে তা মূল্যবৃদ্ধিকে আরো চড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলবে, সোমবার তা টুইটে ভিডিও দিয়ে ব্যাখ্যা করেন কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাটে। নরেন্দ্র মোদির প্রথম দফায় শপথ নেয়ার দিনে ৫৮.৬২ টাকার ডলারের দামের সাথে টানেন তুলনাও। কটাক্ষ করেন রুপির উত্থান নিয়েই পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে তৎকালীন বিরোধী নেতা এবং গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদীর করা সমালোচনাকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, দেশবাসীর আর্থিক দুর্বলতাকেই তুলে ধরছে টাকার দর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চোখ বুজে আছেন।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলছেন, চড়া ডলারের জেরে ভারতের আমদানির খরচ বাড়ায় ওষুধ, ভোজ্যতেল, গাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশের মতো বহু পণ্যের দাম বাড়বে। আমদানিকৃত কাঁচামালে তৈরি জিনিসও আরো দামি হবে। আখেরে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ আয়ের মানুষই। তার আশঙ্কা এর ফলে বাজারে চাহিদা কমতে পারে, যা বিরূপ প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে।
মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দীর আক্ষেপ, ‘বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল সস্তা হলেও দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম হয়তো কমানো হবে না ডলারকে দেখিয়েই। সব মিলিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটা বৃদ্ধির আশঙ্কা।’
পাটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের মতে, টাকার দাম পড়ায় বিদেশে পড়াশোনা এবং ভ্রমণের খরচও বাড়ছে। অর্থনীতির ক্ষতি করে চাহিদা কমবে এ ক্ষেত্রেও। একাংশের দাবি, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পও আমদানির খরচ বাড়ায় বিপদে পড়বে।
রুপির পতনে যা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা
• বিশ্ব বাজারে তেলের দর কমলেও, রুপি তলানিতে নামায় তার সুবিধা নিতে পারবে না ভারত।
• তেল-সহ সমস্ত পণ্যের আমদানি খরচই বাড়বে। ফলে আরো বাড়তে পারে মূল্যবৃদ্ধি।
• রফতানির থেকে আমদানি মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় চওড়া হবে বাণিজ্য ঘাটতি।
• রুপিকে বাঁচাতে রিজার্ভ ব্যাংককে বাজারে ডলার ছাড়তে হওয়ায় কমছে বিদেশী মুদ্রা ভাণ্ডার।
• মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে বর্ধিত সুদে ঋণের চাহিদা ধাক্কা খাবে তার খরচ বাড়ায়।
• সংস্থার বিনিয়োগের আগ্রহ কমবে।
• বিনিয়োগ না বাড়লে তৈরি হবে না কাজ। যা চাহিদাকে বাড়তে দেবে না।
• বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি তুলে নিলে পড়বে সূচক। ধাক্কা খাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা