অনলাইন ডেস্ক ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২,১৬:৪৫
বান্দরবানের তুমরু সীমান্তের জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেল হামলায় এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। অন্য দিকে ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক কিশোরের পা উড়ে গেছে। এ ঘটনার পর আতঙ্কে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। বিজিবি সেখানটায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি জানিয়েছেন সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ৩৪ নম্বর পিলারের কাছে কোনার পাড়ার জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে চারটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এগুলোর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৭ বছরের কিশোর মোহাম্মদ ইকবাল নিহত হয়। এ ছাড়া গোলার আঘাতে আহত হয় পাঁচজন। স্থানীয়রা হতাহতদের কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যান। নিহত রোহিঙ্গা কিশোর মো: ইকবাল জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মনির আহমেদের ছেলে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম পাওয়া যায়নি। এ দিকে এ ঘটনার পর আতঙ্কে রোহিঙ্গা শিবিরের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। আতঙ্কে বন্ধ করা দেয়া হয় তুমব্রু বাজারের দোকানপাট।
গভীর রাতেও সীমান্তে গোলাগুলি শব্দ শোনা যাচ্ছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন রাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিমান থেকে হামলা চালায়। জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সরদার (মাঝি) দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন দুপুরে মাইন্ড বিস্ফোরণে সীমান্তে এক যুবক আহত হওয়ার পর রাত ৮টার দিকে ৩৪ নম্বর পিলারের কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি গোলা এসে পড়ে। পরে আরো তিনটি গোলা সেখানে পড়ে। এদের মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হওয়ায় একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়। ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন ক’দিন শান্ত থাকার পর হঠাৎ করে শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ও জিরো লাইনে বেশ কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া গুলিবর্ষণের শব্দ ব্যাপকভাবে শোনা যাচ্ছে। সীমান্ত বসবাসকারী লোকজন ও রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
এ দিকে শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে জিরো লাইনে গরু আনতে গেলে তুমব্রু হেড ম্যান পাড়ার যুবক উনুসাই তঞ্চঙ্গ্যা (২২) মাইন বিস্ফোরণে তার পা উড়ে যায়। বিস্ফোরণে একটি গরুও সেখানে মারা যায়। স্থানীয়রা তাকে কক্সবাজার হাসপাতাল ও পরে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন সীমান্ত পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি।
এক মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ঘুনধুম রেজু আমতলিসহ ৩৯ নম্বর পিলার থেকে শুরু করে ৪০ নম্বর পিলার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া এ পর্যন্ত ১২টি মটার শেল এসে পড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে।