অনলাইন ডেস্ক  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:২৫

 ছবি – সংগৃহীত

দক্ষিণ সিন্ধুর উপকূল পেরিয়ে এখানে শত শত গ্রাম ও বিস্তৃর্ণ এলাকা। কৃষিজমি পানির নিচে হারিয়ে গেছে। বন্যায় পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা বাঁধ থেকে একটি বিস্তৃত হ্রদের মধ্যে মেহার শহর। মসজিদের মিনার এবং একটি গ্যাস স্টেশনের মূল্য তালিকার বোর্ড দেখা যায়। এই জলাভূমি ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত হবে।

কোনো এক গ্রামের বাসিন্দা আয়াজ আলী এএফপি’কে বলেন, ‘কেউ জানে না তাদের গ্রাম কোথায়, সাধারণ মানুষ আর তার নিজের বাড়ি চিনতে পারে না।’

তার গ্রাম এখন সাত মিটার (২৩ ফুট) পানির নিচে ডুবে আছে।সিন্ধু সরকার বলছে, রেকর্ড বৃষ্টি এবং বন্যায় সিন্ধু নদী উপচে পড়ে এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সারা দেশে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় দুই মিলিয়ন ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, সাত হাজার কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২৫৬টি সেতু ধসে পড়েছে।
বাস কন্ডাক্টর আয়াজ আলী নৌবাহিনীর নেভিগেটর হিসেবে বিদ্যুতের লাইন এবং উঁচু গাছের অবস্থান দেখে গ্রামগুলো শনাক্ত করছেন।

নৌবাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকরা দুটি লাইফবোটে করে লোকদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে এবং স্থানীয়দের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে তাদের শহরে নিয়ে আসছে।

নৌকাটি গাছের চূড়া দিয়ে ধীরে ধীরে চলাচল করে এবং পানি ঘেরা ভাঙা ঘরগুলোর একটি গ্রামের সামনে বিদ্যুতের লাইনের উপর দিয়ে চলে।

অনেকে এখনো তাদের বাড়িঘর ছাড়তে অস্বীকার করছে, তাদের গবাদি পশু চুরি হয়ে যাবে বা মারা যাবে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে আরো খারাপ পরিস্থিতির ভয়ে তারা নিজের ঘরবাড়ি ছাড়তে চায় না।

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বের হতে নিষেধ করে হাঁটু পানিতে ডুবে আছির আলী বলেন, ‘আমাদের জীবন-মৃত্যু গ্রামের সাথে জড়িত। আমরা কীভাবে চলে যাব?’

কিছু সামান্য জ্বরে আক্রান্ত পুরুষ, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু এবং একজন বয়স্ক নারী, সব মিলে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ লোক নিয়ে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তাদের মধ্যে একজন অল্পবয়সী মা যিনি সম্প্রতি তার নবজাতককে হারিয়েছেন, যখন গত সপ্তাহে তার বাড়ির চারপাশে পানি উঠেছিল।

হিট স্ট্রোকের প্রভাবে তার মাথা ঘোরাচ্ছে, পাশে দুই বছর বয়সী শিশুটিও জ্বলন্ত মধ্যাহ্নের সূর্যের তাপে ব্যথিত- একজন নৌসেনা উভয়কে বারবার পানিতে ভিজিয়ে দিচ্ছিলেন।

একটি নতুন ১০ কিলোমিটার মাটির বাঁধ এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ জনসংখ্যার মেহার শহরকে বন্যার গ্রাস থেকে আটকে রেখেছে।

তবে শহরটির বাস্ত্যুচ্যুতরা গত তিন সপ্তাহ ধরে গাড়ির পার্ক, স্কুল এবং মোটরওয়েতে অস্থায়ী ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছে।

‘আরো পরিবার ক্যাম্পে আসছে। তারা একটি ভয়ানক অবস্থার মধ্যে রয়েছে,’ পাকিস্তান-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আলখিদমত ফাউন্ডেশনের মুহাম্মদ ইকবাল এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, এই ফাউন্ডেশন শহরের বৃহত্তম ক্যাম্পে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রায় চার শ’ জন লোক রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রচুর পানীয় জল এবং টয়লেট সুবিধা প্রয়োজন,’ কিন্তু তাদের আরো অপেক্ষা করতে হতে পারে সরকারের অগ্রাধিকার প্লাবিত অঞ্চলগুলো নিষ্কাশন পর্যন্ত।

স্ফীত বাঁধ এবং জলাধারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সকলেই শহর রক্ষার বাঁধ বজায় রাখতে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে এসেছে।

কিন্তু গ্রামীন দরিদ্র এলাকায় তা হয়ে ওঠেনি। শহরের ক্যাম্পের কাঠের চৌকিতে বসে ৩০ বছর বয়সী উমাইদা সোলাঙ্গি একথা বলেন। তিনি তার বাচ্চাদের নিয়ে এখানে অবস্থান করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *