অনলাইন ডেস্ক ৪ আগস্ট, ২০২২ ০৬:৩০
ব্যাংক খাতে সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে দেশের দুর্বল ১০টি ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিং করে এ কথা বলেন। কিন্তু তিনি চিহ্নিত ব্যাংকগুলোর নাম উল্লেখ করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ওই ব্রিফিংয়ে চার ডেপুটি গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
এখানে বলা হয়, ব্যাংকব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করতে চারটি চলকের ওপর ভিত্তি করে এ দফায় ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। চলকগুলো হচ্ছে শ্রেণীকৃত ঋণের মাত্রা, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনের পরিমাণ। চিহ্নিত দুর্বল ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদাভাবে আলোচনা কার্যক্রম শুরু করছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো একটি তিন বছর মেয়াদি ব্যবসার পরিকল্পনা দেবে, যার ক্রম অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
কোন ১০টি ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর নাম প্রকাশ না করে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘একটি ব্যাংক খারাপ হলে অন্যটির ওপর এর প্রভাব পড়ে। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধের পক্ষে নই, আমানতকারী যেন তাঁর টাকা ফেরত পান সেটা নিশ্চিত করতে চাই। সব ব্যাংক ব্যবসা করবে, লাভ করবে, বাজারে টিকে থাকবে, এটা আমরা চাই। ’ তিনি বলেন, ঋণ ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের জন্য ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণ ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সার্কুলার পুনরায় কিছুটা স্পষ্ট করা হয়েছে। কয়টি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে খেলাপি হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
এক শ্রেণির আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে মানুষ টাকা ফেরত পাচ্ছে না, এক শ্রেণির দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় কি না—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘এক শ্রেণির আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা এসেছে। আমরা চাই ব্যাংকের প্রতি যাতে অনাস্থা না আসে। সে জন্যই আমরা এই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’
দেশের আমদানি হার কমে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মার্কিন ডলারের ব্যবহার রয়েছে—এমন অন্যান্য সূচকেও এর চাহিদা কমে আসবে এমন ইঙ্গিত মিলছে। এই সুবাদে আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের মুদ্রাবাজারে ডলারের মূল্য স্থিতিশীল হবে বলে জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি আরো বলেন, মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়ে এলে তখন বাজারমূল্যের ভিত্তিতে আন্তঃ ব্যাংক পর্যায়ে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত হবে। বর্তমানে আন্তঃ ব্যাংক লেনদেন নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করছে।
সরকারি বন্ড শিগগিরই সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন হবে বলেও জানান আব্দুর রউফ তালুকদার। পুঁজিবাজারের ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার লিমিট (বিনিয়োগসীমা) বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজার উন্নয়নে ভালো কাজ করছে। তাদের নীতি সহায়তার জন্য যা দরকার আমরা দেব। ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার লিমিটে নিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছরের একটা সমস্যা ছিল। এই বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। ’
গভর্নর বলেন, ‘আসলে ক্যাপিটাল মার্কেটের দুটি দিক আছে। এর মধ্যে একটি হলো ইকুইটি এবং অন্যটি ডেবট। ইকুইটি হলো শেয়ার, আর ডেবট হলো বন্ড। আমরা শেয়ার মার্কেট নিয়ে অনেকে কাজ করছি। কিন্তু বন্ড নিয়ে কাজ তেমন হয়নি। ’
গভর্নর আরো জানন, ‘কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি অর্থসচিব থাকাকালে আলাপ হয়েছে। তখন বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজের পরামর্শ দিয়েছি। তিনি দীর্ঘদিন বন্ড মার্কেট নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের কাজও শেষ পর্যায়ে। আমরা সরকারি বন্ডগুলোকে শিগগিরই সেকেন্ডারি মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করে ফেলেছে। ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক) হয়ে গেছে, এখন লাইভে (লেনদেনে) যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। সরকারি বন্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি হবে। ভালো কম্পানি বন্ড নিয়ে আসুক আমরা তা চাই। ’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা, খেলাপি ঋণের মূল কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। আমরা যদি বন্ড মার্কেট কার্যকর করি, তাহলে এই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যাংক থেকে কমে যাবে। খেলাপিও কম হবে। আমরা চাই ভালো ভালো কম্পানি ক্যাপিটাল মার্কেটে বন্ড নিয়ে আসুক। তারা বন্ড ইস্যু করুক। সেকেন্ডারি মার্কেটকে কার্যকর করতে এবং নতুন নতুন বন্ড আনতে যত ধরনের সহায়তা দরকার তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে করা হবে। ’