মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা ১২ জুন ২০২২, ০০:০০
ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও মনু রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী পতনউষার এলাকার ডাকবেল-চক কবিরাজি নামক স্থানে চলন্ত ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তবে আগুনে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে প্রায় দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল শনিবার বেলা ১টার দিকে ট্রেনের পাওয়ার কার থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের সময় সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ট্রেনযাত্রী সুকেশ দাশ জানান, আমি শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে উঠি। ট্রেনটি শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করার পরই টয়লেটের পাশে থেকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ সময় যাত্রীরা চিৎকার শুরু করেন। সিলেটগামী ট্রেনযাত্রী আবদুল জব্বার জানান, বেলা ১টার দিকে সময় আন্তঃনগর পারাবত ট্রেনের বগিতে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেলে যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজনও এগিয়ে আসে। এ সময় প্রথমে দ্রুত যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। স্থানীয় লোকজন হাঁড়ি-পাতিল দিয়ে ট্রেনের বগিতে আগুন নিভানোর জন্য পানি মারতে থাকে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভাতে শুরু করে। ডাকবেল এলাকার স্থানীয় পতনউষার ইউপি সদস্য সিরাজ খানসহ স্থানীয়রা জানান, ট্রেনটি বেলা প্রায় ১টার দিকে শমশেরনগর রেল স্টেশন অতিক্রম করে। কিছুক্ষণ পর থেকেই ট্রেনের জেনারেটরের বগিতে আগুনের সূত্রপাত দেখা যায়। পরবর্তীতে তেলের ট্যাংকি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৩ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর ডাকবেল-চককবিরাজি এলাকায় যাত্রীদের চিৎকারে ট্রেনটি থামানো হয়। তখন যাত্রীরা দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীদের সহযোগিতায় ট্রেনের কর্তৃপক্ষ আগুন লাগা তিনটি বগি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে ট্রেনের জেনারেটর বগি ও পাশের যাত্রীবাহী দু’টি এসি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনার প্রায় ১ ঘণ্টা পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কমলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও পরে মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে সর্বমোট চারটি অগ্নিনির্বাপক দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় ট্রেনের তিনটি বগি ছাড়া কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ায় ট্রেনের সামনের ৮টি বগির যাত্রীরা কুলাউড়া স্টেশনে ও পেছনের বগির যাত্রীরা নিজ নিজ খরচে সড়কপথে সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছান।
আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক মো: ইসমাইল বলেন, ট্রেনের পাওয়ার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ট্রেন থামানোর পর দেখা যায় চাকার মধ্যে আগুন ও পরে তেলের ট্রাংকিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার মো: জামাল উদ্দীন বলেন, ট্রেনটি প্রায় ১টার দিকে শমশেরনগর স্টেশন ছেড়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লংলা স্টেশনে ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলে আটকা পড়ে। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্থানীয় লোকদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবদুল হককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।