অনলাইন ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৪৯
বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো সম্প্রতি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম গত দেড় মাসে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ বেড়েছে।বাংলাদেশে এখনো মানুষের চিকিৎসা বাবদ মোট খরচের বড় অংশই ওষুধের পেছনে ব্যয় হয়, সেখানে বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো সম্প্রতি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম গত দেড় মাসে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ বেড়েছে।।
জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ওষুধের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে দাবি ওষুধ প্রশাসনের।তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এভাবে ওষুধের দাম বাড়লে চিকিৎসা বড় সঙ্কটে পড়বে।ঢাকার বাসিন্দা ইভানা গাজীর বাড়িতে শিশু এবং প্রবীণ দুই বয়সের মানুষের জন্য প্রতিমাসে ওষুধ কেনা বাবদ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা রাখতে হয়।তার সন্তানের প্রায়শই ঠাণ্ডা জ্বর লেগে থাকে। অন্যদিকে, তার বাবা বেশ কয়েক বছর ধরেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এজন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতেই হয়।
যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা সেখানে গত জুলাই মাসে বহুল ব্যবহৃত ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে।ইভানা গাজীর পরিবারকে এ ধরনের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়মিত কিনতে হয়। যার কারণে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
তিনি বলছিলেন, আমার বাচ্চার ওষুধ যদি দু’হাজার থেকে চার হাজার টাকা হয়ে যায়, আমার বাবার ওষুধের দাম যদি তিন থেকে ছয় হাজার টাকা হয়, তাহলে আমার মাসে চলবো কীভাবে? আমাদের রোজগারই বা কতোটুকু। ওষুধ বাদ দিলে তো হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। সেই অবস্থাও তো নেই। ওষুধ তো বাদ দেয়া সম্ভব না।
ওষুধের দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্যারাসিটামল, সেইসাথে রক্তাচাপ, হৃদরোগ, ব্যাথানাশক ও পেটে গ্যাসের সমস্যার নিয়মিত ওষুধগুলোর দাম ৫০ শতাংশ থেকে ১৩৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ কিছু ওষুধের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে।ওষুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিকে দুষছেন ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মুক্তাদির।তিনি বলছেন, গত মাসে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৮০ টাকা ডলারে। শিপমেন্ট পৌঁছানোর পর ডলারের দাম উঠেছে ১১০ টাকায়। প্রতি ডলারে ৩০ টাকা করে বেশি দিতে হয়েছে।
এছাড়া মোড়ক, পরিবহন, বিপণন ব্যয় বাড়ার প্রভাবও ওষুধের বাজারে দেখা যাচ্ছে।ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো আরো বেশকিছু ওষুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দিয়েছে।
সেগুলো যাচাই বাছাই করে, যৌক্তিক মনে হলেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে একজন মানুষের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ ওষুধ বাবদ খরচ হয় এবং এই খরচ করতে রোগীর পকেট থেকেই।
অর্থাৎ দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে গিয়ে ওষুধেই মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে।বাংলাদেশে যেখানে স্বাস্থ্যবীমা খুবই সীমিত সেখানে ওষুধে এই বাড়তি দাম রোগীর ওপরে চাপ আরো বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাহিদ আক্তার জাহান।এর বাইরে যে ওষুধ রয়েছে, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো।
সূত্র : বিবিসি