চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকা বা এর আশেপাশে, ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। বাজারে ডিমের যে মূল্য দেখা যাচ্ছে তাতে ডিম এখন সীমিত আয়ের মানুষের কাছে ‘সাশ্রয়ী’ কোনো পণ্য নয়। বাজারের ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। তবে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বজুড়েও বেড়েছে ডিমের দাম। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপানেসহ বিভিন্ন দেশে ডিমের দাম বেড়েছে।
এর আগেও গত বছরের আগস্ট মাসে ডিমের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল।
ওই সময় ডিমের বাজার মূল্য নিয়ে যে আলোড়ন হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন,‘বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করা হবে।’
এরপরে কিছুদিন দাম কমতির দিকে থাকলেও গত কয়েক মাসে ডিমের দাম ছিল বাড়তির দিকে। আর চলতি সপ্তাহে ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা করে। হঠাৎ করে ডিমের দাম আবার বাড়ছে কেন?
পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যে খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি খাদ্যের দামে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন,পোল্ট্রি খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা, সয়ামিলসহ বিভিন্ন কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। আর পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। পোল্ট্রি খাদ্য, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, এ কারণে ডিম ও মুরগির দামও বেড়েছে।
পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলারের দামের কারণে আমদানির খরচ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতে ডলার সঙ্কট থাকায় লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে খাদ্য আমদানি বাজারে সরবরাহে ঘাটতিও তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এম খান বলছেন, ‘৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ খাদ্যের উপাদান আমদানি হয়। ফরেন কারেন্সির সমস্যার কারণে এই খাতে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যের চালান আসতে সমস্যা হচ্ছে।’
এম এম খান বলছেন,পোল্ট্রি খাদ্যের চড়া দামের কারণে লোকসান দিয়ে ছোট অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে উৎপাদন এখন কম।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে মুরগির বাচ্চার দাম না পাওয়ায় দেশে মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এম এম খান জানান, ‘গত এক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়েছে।’ দাম এ রকম বাড়তে থাকলে বাকি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলছেন, ডিমের দাম বাড়লেও খামারিরা এর কোনো সুফল পাচ্ছে না। কারণ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আড়ত ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। দেশের যে জায়গাগুলোতে দাম নির্ধারণ হয়, তা কেন্দ্র করেই দেশব্যাপী ডিমের দাম ওঠানামা করে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দাম বেধে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ে না, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম পরিবহন খরচ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ডিমের দাম নির্ধারণ হয়।
বাজারে যে চাহিদা তার বিপরীতে কম সরবরাহ হলেও ডিমের দাম বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলছেন, ‘উৎপাদন খরচ কমাতে না পারলে ডিমের দাম কমবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ
তবে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বজুড়েও বেড়েছে ডিমের দাম।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগ মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হচ্ছে, জানুয়ারি মাসে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ডিমের দাম বেড়েছে আট দশমিক পাঁচ শতাংশ। আর জানুয়ারি জুড়ে ডিমের দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক এক শতাংশ।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে এভিয়েন ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে সেখানকার প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ পাখি মারা যায়। এই কারণে দেশটিতে ডিমের বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি মুরগির খাদ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াও একটা কারণ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ব্যাপকহারে। তবে দেশটির ডিমের দাম রেকর্ড হারে বেড়েছে ।
এছাড়া কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ডিমের দাম বেড়েছে।
জাপানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, টোকিওতে ডিমের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে বৃহস্পতিবার।
তবে শুধু বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবেই যে বিশ্বজুড়ে ডিমের দাম বেড়েছে তা নয়। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও এর অন্যতম কারণ।
সূত্র : বিবিসি