০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০ :৪০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সততার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ষাটোর্ধ্ব এমদাদুল হক। জীবনে যতবার বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়েছেন- সেই হিসাব করে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করেছেন তিনি।
গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর)তিনি স্বেচ্ছায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে টিকিট মূল্য ২৫৩০ টাকা পরিশোধ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইল এলাকার বাসিন্দা এমদাদুল দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনে।গেল বছরের ডিসেম্বরে অবসর নেন চাকরি থেকে।তবে চাকরিরত অবস্থায় ট্রেনে যাতায়াতের সময় বেশ কয়েকবার টিকিট কাটতে পারেননি তিনি।
বিনা টিকিটে কতবার ভ্রমণ করেছেন তার হিসাব করে রাখেন এমদাদুল। পরকালের কথা মাথায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন রেলের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার। সে অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে ২৫৩০ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তার এই সততাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্বজন ও স্থানীয়রা। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের বাবা।
টিকিট বুকিং সহকারী এমদাদুলকে ২৫৩০ টাকা সমমূল্যের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের কয়েকটি আসনবিহীন টিকিট দেন। এরপর টিকিটগুলো ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। মূল্য শোধ করতে পেরে মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছেন বলে জানান এমদাদুল হক।
এমদাদুল হক জানান, চাকরিকালে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের বিভিন্ন ট্রেনে বিনা টিকিটে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন তিনি। কিন্তু এখন অবসর জীবনে এসে অনুশোচনায় ভুগছেন। কাজটা অন্যায় হয়ে গেছে-এমন অনুশোচনা থেকেই রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাড়া পরিশোধ করা হয়।
এমদাদুল হক বললেন, “এই দেনার দায় তো কোন পুণ্য দিয়ে শোধ করার উপায় নেই। তাই সরাসরি রেলের খাতেই টাকা জমা দিয়ে দিলাম। জানি না তাতে আমি দায়মুক্ত হবো কি না, তবে মানসিক প্রশান্তি পাবো।“
‘দ্য ট্রেন‘- নামের একটি ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন সোহেল রানা ভূঁইয়া এই ঘটনাটি উল্লেখ করে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। সোহেল রানা ভূঁইয়া বলেন,আমরা দেখতে পাই প্রতিবছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করতে চায় এবং এটাকে তারা তাদের অধিকার মনে করে। এমদাদুল হকের সততার এই দৃষ্টান্তটি বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণকারীদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। কারণ, পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং সোশ্যাল মিডিয়া– কেউই আমাদের নবীনদের নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী দিদার মোল্লা উল্লেখ করে বলেন,ট্রেন যাত্রী এমদাদুল হক একসময় ভুল করে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন। তখন তিনি চাকরি করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অবসরে যাওয়ার পর থেকে অনুশোচনায় ভুগছিলেন। আর এজন্য তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রেলওয়ে থেকে দায়মুক্তির জন্য আজ তিনি ২৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট কেটে পূর্বের ভ্রমণের দায় পরিশোধ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন,”জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে সততার এমন একটি নজির স্থাপন করাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অভিভূত হয়েছেন। এখন থেকে ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বয়োবৃদ্ধ এমদাদুল হককে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।”