অনলাইন ডেস্ক ১৭ জুলাই ২০২২, ১২:২২

পৌনে দুই শ’ রান এক দিনের ম্যাচে তেমন কোনো কঠিন টার্গেটই ছিল না। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই গায়ানার মাঠে মোটেই সহজ ছিল না ১৭৮ রান তাড়া করে জেতাটা। বল দেরিতে আসছিল ব্যাটে। সাথে ক্ষণে ক্ষণে নিচু হয়ে যাচ্ছিল। সাথে যোগে হয় সেট ব্যাটার তামিম, লিটন এবং মোসাদ্দেক সৈকত, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের উইকেট বিলিয়ে দেয়াটা। যা বেশ জটিল করে দেয় বাংলাদেশের জয়। তামিম ও লিটন দাসের দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রান আসার পরও ১১৬ রানে ৫ উইকেটের পতন চাপে ফেলে দেয় টাইগারদের । এরপর ১৪৭ এ আউট রিয়াদ। মনে হচ্ছিল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা ১১তম ওয়ানডে ম্যাচে জেতা হবে না। শেষ পর্যন্ত ৭ম উইকেটে নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৩২ রানের জুটি গতকাল গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটের জয় এনে দেয়। তখনো নয় বল বাকি ছিল। ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০তে হোয়াইট ওয়াশ করলেন তামিম ইকবালরা। তামিম বাহিনী আগের দুই ওয়ানডে জিতেছিল ৬ ও ৯ উইকেটে। ৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নুরুল হাসান সোহানের ৩১ রানে জুুটি জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল টাইগারদের। কিন্তু ৬১ বলে ২৬ রান করা রিয়াদ বিপক্ষ অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের বলে স্ট্যাম্পড হয়ে গেলে টেনশনটা আরো বাড়ে। এরপর সোহান ও মিরাজ অবিছিন্ন থেকে জয় নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের। সোহান ৩২ ও মিরাজ ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পরও গতকাল কোনো ছাড় দেয়নি এই ম্যাচ জিততে।
বাংলাদেশের এই জয়ের জন্য ১৭৯ রানের টার্গেটা এসেছে স্পিন ও পেসারদের নিখুঁত বোলিংয়ের কল্যাণে। বিশেষ করে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে। টেস্ট বোলার হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন তাইজুল। অবশ্য এর পরও এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর টেস্টে তাকে খেলানো হয়নি। দুই টেস্ট শেষে দেশে ফেরার বিমানে চড়ার কথা ছিল এই বাঁ হাতি স্পিনারের। কিন্তু সাকিব আল হাসান সিরিজের ওয়ানডেগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ায় বিকল্প হিসেবেই রেখে দেয়া হয় তাইজুলকে। এর পরও সুযোগ মেলেনি প্রথম দুই ওয়োনডেতে। আগের দুই ওডিআই জিতে সিরিজ নিজেদের হওয়ায় কাল নিয়মরক্ষার ম্যাচে সুযোগ দেয়া হয় তাইজুলকে। পেসার শরিফুলের বদলে ওয়ানডে দলে জায়গা ২০২০ সালের মার্চের পর। ফিরেই স্বরূপে এই বোলার। শেষ পর্যন্ত তার ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪৮.৪ ওভারে ১৭৮ রানে অলাআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১০ ওভারে দুই মেডেনে ২৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তাইজুল।
সহজ লক্ষ্য সত্ত্বেও ব্যাটিং প্রতিকূল উইকেটে অতি সতর্কতা নিয়েই ব্যাট করতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও শান্ত। অবশ্য পরে ৭ম ওভারেই বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন। দলীয় ২০ রানে আলজারি জোসেফের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৩ বলে মাত্র ১ রান করেন এই ওপেনার। ওয়ান ডাউনে এসেই অবশ্য চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন লিটন দাস। ১২.৫ ওভারে বাংলাদেশ ৫০ রান পূরণ করে। ৩৪ রান করে দলীয় ৭০ রানে তামিম আউট হন ছয় মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন। চার মেরে শুরু করা লিটন দলীয় ২৫তম ওভারে ৫০ রান করার পর গুদাকেশ মতির বলে তার হাতে দুর্দান্ত রিটার্ন ক্যাচের শিকার হন । ৬৫ বলে তার এই অর্ধশত রান। ৯৬ রানে ৩ উইকেটের পতনের পর মাহমুদুল্লাহর সাথে জুটি গড়েন আফিফ হোসেন। কিন্তু সেই ওভারেই মাত্র দুই বল খেলে মতির বলে বোল্ড আফিফ। তার রানের খাতা শূন্য। এরপর মোসাদ্দেক সৈকতকে আউট করে ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন গায়ানার সন্তান মতি। তামিমের উইকেটটিও নেন তিনি। দলীয় ১১৬ রানে আউট হন সৈকত।
তাইজুলের এর আগে ওয়ানডেতে সেরা বোলিং ছিল ২০১৪ সালে। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই ১১ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। কাল নিজের দশম ওভারে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। ক্যারিবিয়ানদের সাদা বলের অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে বোল্ড করে নিজের নামের পাশে জমা করেন ৫ম শিকার। নিজেদের ইনিংসে একমাত্র ফিফটি এবং সর্বোচ্চ ৭৩ রান আসে পুরানের ব্যাট থেকে। এর আগে তাইজুলের বলে সাজঘরে ফেরেন শাই হোপ, ব্রেন্ডন কিং, রভমেন পাওয়েল ও কেমো পল। শাই হোপ ও কেমো পলকে তার বলে স্ট্যাম্পিং করেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। অন্য তিন ব্যাটারই বোল্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে কিয়েসি কার্টির ব্যাট থেকে ( ৩৩ রান)। অবশ্য মোস্তাফিজের বলে তামিম যদি শেফার্ডের সহজ ক্যাচটি ফেলে না দিতেন, তা হলে হয়তো আরো আগেই গুটিয়ে যেত ক্যারিবিয়ানরা। এই রোমারিও শেফার্ড শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ১৯ রান করেছেন ১ চার ও ১ ছক্কায়।
ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইনে বাকি ধসটা নামান পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরা মিলে। মোস্তাফিক ও নাসুম দু’টি করে উইকেট পান যথাক্রমে ২৪ ও ৩৯ রান দিয়ে। মোসাদ্দেকের একটি শিকার ১০ ওভারে ২৩ রানের বিনিময়ে। তবে ব্যয়বহুল মেহেদী হাসান মিরাজ ৮ ওভারে ৬১ রান দিয়েও কোনো উইকেট পাননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৭৮। ৪৮.৪ ওভারে (হোপ ২, ব্রেন্ডন ৮, ব্রুকস ৪, কার্টি ৩৩, পুরান ৭৩, পাওয়েল ১৮, কেমো পল ৬, আকিল ১, শেফার্ড ১৯, মতি ২, জোসেফ ৭ অপ:; তাইজুল ৫/২৮, নাসুম ২/৩৯, মোস্তাফিজ ২/২৪, মোসাদ্দেক সৈকত ১/ ২৩)
বাংলাদেশ ইনিংস : ১৭৯/৬। ৪৮.৩ ওভারে (তামিম ৩৪, শান্ত ১, লিটন ৫০, আফিফ ০, মোসাদ্দেক সৈকত ১৪, মাহমুদুল্লাহ ২৬, সোহান ৩২ অপ:, মিরাজ ১৬ অপ:; মতি ৪/২৩, জোসেফ ১/২৫, পুরান ১/৩৫)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *