অনলাইন ডেস্ক ২৬আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৫
হাইপারটেনশন (ইংরেজি: Hypertension), যার আরেক নাম উচ্চ রক্তচাপ, HTN , বা HPN, হল একটি রোগ যখন কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে। হাইপারটেনশনকে প্রাথমিক (আবশ্যিক) হাইপারটেনশন অথবা গৌণ হাইপারটেনশনে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। প্রায় ৯০–৯৫% ভাগ ক্ষেত্রেই “প্রাথমিক হাইপারটেনশন” বলে চিহ্নিত করা হয়।মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপ। সাধারণত রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। উচ্চ রক্তচাপ অনেক সময় অনেকেই ‘প্রেসার‘ হিসেবে অভিহিত করেন। সাধারণত মানসিক চাপ, দূষণ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হঠাৎ করে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
অনেকেই হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে গেলে চিনি-পানি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খান। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে কী করতে হয় তা অনেকেই জানেন না। এতে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-ভার্টিগো বা মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, তীব্র মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে রক্তপাত, চরম ক্লান্তি ও বিভ্রান্তি, বুকে ব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি।
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত—
ভিড় থেকে সরে যান
উচ্চ রক্তচাপ বাড়লে প্রথমেই ভিড় থেকে সরে যেতে হবে। ভিড়ে কারণে আতঙ্ক বেড়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি মানুষের কণ্ঠস্বর ও যানজট ইত্যাদিতেও মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়; যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে।
বাতাসে বসুন
রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাজা ও খোলা বাতাসে বসুন বা শুয়ে থাকুন। এসি বা ফ্রান চালু করুন এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন।
গভীর শ্বাস নিন
গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এটি আপনাকে মানসিক চাপমুক্ত থাকতে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সহায়তা করবে। এতে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে। ফলে হৃদস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পানি পান করুন
শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা স্বাভাবিক হওয়া পর, পানি পান করুন। পানি যেন খুব ঠান্ডা বা গরম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন
আপনি যদি ইতোমধ্যে কোনো উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান, তাহলে সেই ওষুধ খেয়ে নিন। আর এ ধরনের সমস্যা প্রথম বার হলে অন্তত আধাঘণ্টা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। বেশি খারাপ মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জীবনযাপনে পরিবর্তন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে:
- খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া – লবণের সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তের আয়তন ও চাপ বেড়ে যায়।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা – ধূমপান শরীরে নানা ধরণের বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনী ও শিরার নানারকম রোগ-সহ হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করা – শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্রের অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়। বেশি ওজনের মানুষের মধ্যে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করা – নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে হৃৎপিণ্ড সবল থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কম করা – রাগ, উত্তেজনা, ভীতি অথবা মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘসময় ধরে মানসিক চাপ অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা – মাংস, মাখন বা তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণেও রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত করে ফেলে। এর ফলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যেতে পারে।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।